পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে হিংসা। কোথাও শাসকের দুই গোষ্ঠী, কোথাও শাসক বনাম বিরোধী। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বেড়েই চলেছে লাশের সংখ্যা। আর এ নিয়েই সোমবার উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের মন্ত্রীদের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় সময় দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে হিংসার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত মন্ত্রীকে এলাকায় সময় দেওয়ার নির্দেশ দেন। দেগঙ্গার অশান্তি নিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলেন, ‘কী হচ্ছে দেগঙ্গায়? দেখো। এলাকায় সময় দাও।’ একই কথা বলেন অন্য মন্ত্রীদেরও। বোর্ড গঠনে যাতে অশান্তি না হয় সে বিষয়টি যে জেলার মন্ত্রীদেরই দেখতে হবে তাও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
যে দিন নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক হচ্ছে সেদিনও জেলায় জেলায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা, গুলি চলেছে। মৃত্যু হয়েছে একাধিক। সংঘর্ষের মাঝে পড়ে আহত হয়েছে তিন বছরের শিশুও। মালদায় প্রাণ গিয়েছে শাসক দলের দুই কর্মীর। পুরুলিয়ার জয়পুরে মৃত্যু হয়েছে এক বিজেপি কর্মীর। সব মিলিয়ে গ্রামের সরকার গঠন পরিণত হয়েছে বারুদ, রক্ত আর লাশে।
মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও সতর্ক করেছিলেন দলের নেতা-মন্ত্রীদের। কিন্তু কাজের কাজ কিস্যু হয়নি। মনোনয়ন পর্বেও হিংসার ঘটনা ঘটেছিল জেলায় জেলায়। তারপর নির্বাচনের আগে দলের ভিতর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দু একটাতে হারি ক্ষতি নেই, কিন্তু খুন খারাপি চলবে না।’ কে শোনে কার কথা। গত ১৪ মে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন লাশের পর লাশ পড়েছিল বাংলার জেলায় জেলায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুন, তৃণমূলের নীচু স্তরের নিয়ন্ত্রণ আর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে নেই। কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, শাসক দলের নিচু স্তরের কর্মীদের কাছে পঞ্চায়েত পরিণত হয়েছে করে খাওয়ার জায়গায়। ফলে সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম, বিজেপি’র লড়াই যা, তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াইও তাই। এই করে খাওয়ার রাজনীতির মাশুল গুনতে হয়েছে তৃণমূলকে। পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রামে ধাক্কা খেয়েছে শাসক দল। ফলাফলের প্রাথমিক পর্যালোচনায় ঘাসফুল শিবিরের নেতারা বুঝে গিয়েছেন, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নেই। সরকারি প্রকল্পের টাকা চলে গিয়েছে তাঁদের পকেটে। ফলে ঝাড়গ্রামে পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। সামনের বছর লোকসভার ভোট। সেই কারণেই গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বিগ্ন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
Be the first to comment