মঙ্গলবার গভীর রাতে কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ব্যাটালিয়নের কর্মীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের জেরে আজ বুধবার সকালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে আচমকা উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে ওই কর্মীদের আনা সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই নবান্ন যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীর এই অকস্মাৎ পরিদর্শন। সূত্রের আরও খবর, ১০.১০ থেকে ১০.২০ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সঙ্গে ছিলেন নগরপাল অনুজ শর্মা।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোডে অবস্থিত পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের চত্বরে এবং বড় রাস্তার ওপরেও বিক্ষোভ দেখান কমব্যাট বাহিনীর উত্তেজিত জওয়ানরা। তাঁদের মূল অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়াই অতিরিক্ত সময় ধরে ডিউটি করতে হচ্ছে তাঁদের। এবং তাঁদের সুরক্ষার কথা ভাবছেন না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভ চলাকালীন দীর্ঘসময় ধরে জগদীশ বোস রোড এবং ডিএল খান রোড অবরোধ করে রাখেন জওয়ানরা। এবং বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে তাঁদের হাতে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন ডেপুটি কমিশনার (কমব্যাট) নভেন্দর সিং পল। তবে তাঁর ও তাঁর দেহরক্ষীর আঘাত সামান্য। পলের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন একাধিক জওয়ান।
এছাড়াও কমব্যাট বাহিনীর জওয়ানদের বক্তব্য, সম্প্রতি বাহিনীর এক কর্মী করোনা আক্রান্ত হন। এবং তারপর আরও তিনজন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনও প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেন নি বলে অভিযোগ। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণ করা হচ্ছে না, এমনকি যথাযথ কোয়ারান্টিন বিধি পর্যন্ত মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এর ফলেই একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন কর্মীরা, এমনটাই জওয়ানদের বক্তব্য। এবং যেহেতু ট্রেনিং স্কুলের ব্যারাক ছাড়াও কোয়ার্টারে বহু পুলিশকর্মী পরিবারসহ বাস করেন, সেহেতু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেকেই।
কলকাতা পুলিশের এই কমব্যাট বাহিনী বিশেষ করে জঙ্গি মোকাবিলা এবং নাশকতা রোখার উদ্দেশ্যে গঠিত এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুরক্ষাও প্রদান করে এই বাহিনী। মঙ্গলবার রাতের এই বিক্ষোভকে তাই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা, যদিও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হন নি কেউই।
মঙ্গলবার রাতে উত্তেজিত জওয়ানদের শান্ত করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান একাধিক আইপিএস অফিসার সমেত পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্তা। এক ঘণ্টার ওপর ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। জওয়ানদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে, এবং সে সংক্রান্ত ব্যবস্থাও দ্রুত নেওয়া হবে, এই আশ্বাস পাওয়ার পর অবরোধ তুলে নেন কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আপাতত ভাবছে না কলকাতা পুলিশ।
Be the first to comment