আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কেন্দ্র পুরো টাকা দিলে রাজ্যের আপত্তি নেইঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Spread the love

মঙ্গলবার খড়্গপুরের প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মেদিনীপুরের জন্য একাধিক বরাদ্দ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন ‘কর্ণগড় মন্দিরের সংস্কারের জন্য ১ কোটি টাকা ও খড়গপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন তিনি।

পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কেন্দ্র ১০০% দিলে আপত্তি নেই। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, কেন্দ্র যদি পশ্চিমবঙ্গে আয়ুষ্মান প্রকল্প রূপায়ন করতে চায় ৷ তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই ৷ আমরা ইতিমধ্যেই ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প এনেছি দু’বছর আগেই ৷ এখন ওরা চায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প রূপায়ন করতে ৷ তার জন্য ওদের স্বাগত ৷ কিন্তু ওই প্রকল্পে রাজ্য সরকারের তরফে একটা টাকাও খরচ করা হবে না ৷ ওরাই ১০০ শতাংশ টাকা দিক আয়ুষ্মান প্রকল্পে ৷

একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এদিন ঘোষণা, তফশিলিদের কেউ ৬০ বছর হলেই পেনশন পাবেন। তফশিলি, সংখ্যালঘুদের প্রকল্পের টাকা দ্রুত রূপায়িত করতে প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নজরে জঙ্গলমহল। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক কিছুটা হলেও ধস নামে। সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে এবার উন্নয়ন অস্ত্রেই জোর দিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসনিক বৈঠকে এদিন উল্লেখ করেছেন, লোধা আর শবরদের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে। দেখতে হবে যাতে ওদের কোনও অসুবিধা না হয়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রশাসনিক সভায় জানিয়েছেন, “মহাশ্বেতা দি মারা যাওয়ার আগে শবরদের নিয়ে অনেক কাজ করতেন। উনি চলে যাবার পরে আমার অনেক দায়িত্ব আছে। শবরদের যাতে কোনও ধরণের অসুবিধা না হয়।

রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, লোধা-শবরদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখে তাদের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে লোধা-শবরদের জন্যে যে ঘর করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলি যাতে দ্রুত করতে পারা যায় সেটিও এদিন উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় এই জনজাতিদের নেতা হাজির ছিলেন। তাদের অভাব অভিযোগ এদিন মুখ্যমন্ত্রী তার মাধ্যমেই শুনেছেন। আদিবাসী ও পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের এই বিষয়ে সর্বদা নজর দিতে বলেছেন। এদিন শিউলি সাহা-সহ তিন বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের এলাকায় আদিবাসীদের জন্যে স্কুল তৈরির জন্যে আবেদন জানান। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন। মাওবাদী আন্দোলনের সময় অনেক নিঁখোজ হয়ে আছেন। বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি। ১০ বছর ধরে তদন্ত প্রক্রিয়া এগোলেও এখনও খোঁজ মেলেনি এমন বহুজন আছেন। সেই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের একজনকে স্পেশাল হোমগার্ড হিসেবে চাকরি আর আর্থিক ভাবে সাহায্য করছে রাজ্য সরকার।

অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার মোট ৪২৮৪ জন যারা মাওবাদী এলাকায় হোমগার্ড ছিলেন তাদের প্রমোশন দিয়ে কন্সটেবল করা হল৷ অন্যদিকে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের কোথাও হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আর্থিক ভাবে সাহায্য করলেও অনেকে কয়েক বছর পরে সব ভুলে যান। আমি মনে রাখি। তাই এদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার একাধিক বিষয়ে তিনি নজর রেখেছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও কাজ ফেলে রাখা যাবে না। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমি রাজনীতির উপরে উঠে কাজ করছি। সকলের জন্যে কাজ করতে চাই।

এদিকে রাত পোহালেই ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। সেই বৈঠককে ঘিরে তৎপরতা তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী আসার যাত্রাপথ কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গা আলাদা আলাদা পয়েন্ট করে কোনও ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারেও আসতে পারেন অথবা সড়কপথে ৷ দু’জায়গাতেই সমস্ত রকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক বৈঠক হবে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। সেখানেও শেষ মুহূর্তের ব্যবস্থাপনা চালানো হচ্ছে। আজ, মঙ্গলবার খড়্গপুরের প্রশাসনিক বৈঠক শেষ করে ঝাড়গ্রামে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। ৭ তারিখ প্রশাসনিক বৈঠক শেষ করে ঝাড়গ্রামেই থেকে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা রওনা দেবেন ৮ তারিখ বৃহস্পতিবার ৷

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*