কখনও মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “প্রধানমন্ত্রী এ সব করেছেন বলে বিশ্বাস করি না।” আবার কখনও বললেন, “প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলতে চাই না।” সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে সুর চড়ালেও একাধিকবার কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করতে শোনা গেল তাঁকে। ইডি বা সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন মমতা। বিধানসভায় এজেন্সির বিরুদ্ধে আনা হয় নিন্দা প্রস্তাব। সংস্থাগুলিকে দিয়ে যে বিজেপিই আসলে এ সব কাজ করাচ্ছে, এমনই দাবি মমতার। তবে তাঁর আক্রমণের নিশানায় বিজেপি থাকলেও, সেই তালিকায় নেই প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের নাম বলছি না। আমি বিশ্বাস করি না এই কাজ নরেন্দ্র মোদী করেছেন।” মমতার দাবি, মোদী নন, এ সব কাজ করছেন অন্য বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আপনি এদের সামলান। আপনাকে এখানে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করতে বলেন এঁরা।” এখানেই শেষ নয়, সৌজন্যের সুরও শোনা যায় এ দিন। মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাল জন্মদিন গিয়েছে। শুভেচ্ছা জানিয়েছি। ওঁকে কিছু বলতে চাই না।”
বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা আরও বলেন, “সরকার আর দলকে এক করবেন না। সরকার চিতা, আর এরা হুলো। চিতা আর হুলো এক নয়। আমি চিতাকে সম্মান করি, কিন্তু ম্যাও ম্যাওকে সম্মান করি না।”
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা কি আসলে কৌশল মমতার? বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে মোদীকে, বিজেপি থেকে আলাদা করে মমতা কি শত্রুপক্ষের বিভাজনের কৌশল নিলেন? ক্ষোভ যখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়েই, তখন তা নিয়ে আলোচনায় কৌশল করেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মোদীকে চটাতে চাইলেন না বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
আবার কেউ বলছেন, এর গভীরে কোনও অন্য রাজনীতি থাকতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই অমিত শাহের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বারবার কটাক্ষ করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মোদীর জন্মদিনে মমতা ও অভিষেক দু’জনেই টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে কি কৌশলে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর মাঝখানেই এবার রাজনৈতিক বিভাজন করতে চাইছেন মমতা? সেই প্রশ্নও উঠছে।
তবে মমতার এ দিনের মন্তব্য ঘিরে ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, বাম বা কংগ্রেস আরও একবার মোদী-দিদি সেটিং-এর তত্ত্ব সামনে তুলে ধরবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Be the first to comment