ভোট পরবর্তী হিংসায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ভোট পরবর্তী হিংসায় এখনও পর্যন্ত ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তারও পরিসংখ্যান দেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
এখনও পর্যন্ত হিংসায় মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেক তৃণমূল কর্মী রয়েছেন। বাকি অর্ধেক বিজেপি কর্মী ও এক জন সংযুক্ত মোর্চার কর্মী। তাঁদের প্রত্যেকের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক একটি চার সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সেই বিষয়টিকে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর সবসময়ই কিছু অশান্তি হয়। সেটা যাতে না হয় তাই ক্ষমতায় আসার পরই আমি কড়া পদক্ষেপ করেছিলাম। সবাইকে শান্তির বার্তা দিয়েছিলাম। সেলিব্রেশন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ২৪ ঘণ্টাও একটা সরকারের হয়নি, তার মধ্যেই লেটার চলে আসছে, টিম চলে আসছে, মিনিস্টার চলে আসছে…আমি বিজেপিকে বলব সংযত হোন। মানুষের রায় মেনে নিন। এখনও মানুষের রায় মানতে পারেনি বলে জিনিসগুলো হচ্ছে।” তাঁর কটাক্ষ, “কই অক্সিজেন যখন লোকে পায় না. টিম আসে না তো, স্যালাইন, ভ্যাক্সিন যখন লোকে পায় না টিম আসে না তো!”
এদিকে, বৃহস্পতিবারই মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি মুরলীধরনের গাড়ির ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। মেদিনীপুরের পাঁচকুড়ি এলাকায় তাঁর কনভয় পৌঁছতেই হামলা শুরু হয়। বাঁশ, লাঠি নিয়ে গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। ছোড়া হয় ইটও। সে প্রসঙ্গে এদিন বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, “আমি চাই না কোনও হিংসা হোক। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন কোনও প্রয়োজন নেই, তখন বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষকে উস্কাচ্ছেন। দাঙ্গার প্ররোচনা দিচ্ছেন। বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে বিজেপি যে জায়গাগুলোতে জিতেছে, সেখানেই অশান্তি বেশি হচ্ছে। ব্ল্যাক স্পট হিসাবে বাছা হয়েছে।”
ঘটনাচক্রে এদিনই দিনহাটায় আক্রান্ত হন তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহ। তাঁর হাত ভেঙে গিয়েছে বলে খবর। সে প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উদয়ন গুহর ওরা হাত ভেঙে দিয়েছে। কোচবিহারে একটু বেশি গুন্ডামি হচ্ছে। যেহেতু কোচবিহারে ওরা একটু বেশি সিট পেয়েছে। যেখানে যেখানে ওরা বেশি সিট পেয়েছে, সেখানে সেখানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েকেও বলব শান্তি বজায় রাখতে। গন্ডগোল করতে কাউকেই ক্ষমা করব না। বিজেপি একটু গুন্ডামিটা বেশি করছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “২৪ ঘণ্টাও হয়নি সরকারের। তার মধ্যেই কালকে চিঠি আর আজকে টিম। টিম এসেছে ভাল কথা। চা-টা খাইয়েছে, চলে গেছে। অতিথিরা আমাদের আসতেই পারে।” এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি তোলেন, প্রতিশ্রুতি মতো পিএম কিসান যোজনার ১৮ হাজার টাকা করে দিক কেন্দ্র। রাজ্য যে কৃষকদের নাম যাচাই করে পাঠিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যেই, সে কথা জানিয়ে দেন তিনি।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে করোনা নিয়ে কড়া পদক্ষেপের কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট করে দেন, কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলার বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এলেও তাঁদের কোভিড পরীক্ষামূলক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোভিড ধরা পড়লে তাঁদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি এদিন জানিয়ে দেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে এলেই দুয়ারে পৌঁছে যাবে রেশন। করোনা মোকাবিলায় পুজো কমিটিগুলিকেই সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Be the first to comment