রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। স্বীকার করলো রাজ্য সরকার। সরকারি হাসপাতালে ১৩ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে শুক্রবার বিধানসভায় জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিষয়টি যে মারাত্মক আকার নিয়েছে তাও স্বীকার করে নিলেন তিনি।
শুক্রবার বিধানসভায় ডেঙ্গি নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। মান্নানের প্রশ্ন ছিল, এই বছর রাজ্যে ১০ হাজার ৫০০-এর মতো মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গি পরিস্থিতি মারাত্মক। সরকার বিষয়টি নজরে রেখেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এরপরই তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। যাঁরা রাজ্যের বাইরে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ফিরছেন। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি।
বিরোধী দলনেতার প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার মানুষজন। কেবলমাত্র উত্তর ২৪ পরগনার ৫৪৭৯ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, পৌরসভা এবং রাজ্য প্রশাসন যৌথভাবে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করছে। নির্দিষ্ট কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা এবিষয়ে কাজ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রতি বছর ডেঙ্গি চরিত্র বদল করে। সরকার পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করছে। মমতার দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁ, বসিরহাটের মতো এলাকা থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, খুলনা, যশোরের মতো বাংলাদেশের শহরগুলি থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত মানুষজন এদেশে আসছে মূলত চিকিৎসা করানোর জন্য। সেখান থেকে ডেঙ্গির প্রকোপ এ রাজ্যে ছড়াচ্ছে। এরপরই বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান প্রস্তাব দেন, তাহলে বিমানে ওঠার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। এপ্রসঙ্গে মমতার মন্তব্য, কতজন মানুষ বিমানে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসেন? অধিকাংশই আসেন সড়কপথে। এরপরই মান্নান প্রশ্ন করেন, তাহলে মমতা কেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলছেন না? উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। আবার এখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
তবে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে মোদির সঙ্গে কথা বলতে যে তিনি প্রস্তুত সে কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, আমাদের সরকার ডেঙ্গি মোকাবিলায় যা পদক্ষেপ করছে, বাম আমলে তার বিন্দুমাত্র করা হয়নি। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে ও মশার লার্ভা বিনষ্ট করতে রাজ্যের বিভিন্ন জলাশয়ে ২ কোটির বেশি গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে।
Be the first to comment