মঙ্গলবার বাগবাজারে ষোড়শ শতকের সন্ত এবং বৈষ্ণব প্রথার প্রতিষ্ঠাতা চৈতন্যদেবের ওপর নির্মিত সংগ্রহশালার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটি সর্বসাধারণের জন্য ১৪ই আগস্ট খুলে দেওয়া হবে। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলবে ১৩ এবং ১৪ই আগস্ট ২০১৯ অর্থাৎ মঙ্গল ও বুধবার। দু’দিনই দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে এই অনুষ্ঠান।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজকে আমি গর্বিত যে শ্রী শ্রী চৈতন্যদেবের এই যে মিউজিয়াম ভারতবর্ষে প্রথম আপনারা বাংলার মাটিতে তৈরি করতে পেরেছেন। এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের কথা। আমরা আরও গর্বিত এই জন্য যে শ্রী শ্রী চৈতন্যদেবের যে মিউজিয়ামটি তৈরি হয়েছে সেটা গোটা পৃথিবীতে একটাই আর সেটা বাংলায় অবস্থিত। এই জন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার জানাই আমি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ৫০০ বছরের অধিক সময় ধরে চৈতন্যমহাপ্রভু আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন একটাই কারণে আমরা প্রতিদিন যে কথা ভাবি দিন চলে যায় সময় চলে যায় মাস চলে যায়, বছর চলে যায়,শতাব্দী আসে, শতাব্দী চলে যায়, কিন্তু কিছু তো থেকে যায়, কি থেকে যায়? চন্দ্র থেকে যায়, সূর্য থেকে যায়, গ্রহ থেকে যায়,তারা থেকে যায় প্রকৃতি থেকে যায়, আকাশ থেকে যায়, মাটি থেকে যায়, ইতিহাস থেকে যায়, মানবিকতা থেকে যায়, পৃথিবী থেকে যায়, আর মনে রাখবেন পৃথিবী যখন থেকে যায় তখন পৃথিবীর কতগুলো বিশেষ বিশেষ দিকও থেকে যায়, তারা কখন থেমে যায় না।
মমতা আরও বলেন, জগৎ হচ্ছে চলমান জগতে কেউ আসবে কেউ যাবে, পার্থিব জগৎ চলে যাবে কিন্তু জীবন দর্শন থেকে যাবে। বড় মানুষ হওয়া এতো সহজ কাজ নয়, বড়ো মানুষ হতে গেলে অনেক ত্যাগ করতে হয়। বড়ো মানুষ হতে গেলে মন বড় রাখতে হবে, বড়ো মানুষ সেই হতে পারবে যে সবাইকে বড় দেখে সবাইকে ভালো দেখে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেই ভাষায় বলেছেন ওরে মা কে কেউ মা বলে, কেউ মাদার বলে, কেউ আম্মি বলে, জলকে কেউ জল বলে, কেউ পানি বলে, কেউ ওয়াটার বলে তফাত এইটুকুই। আমরা সকলে কিন্তু মানুষ, সর্বধর্ম সমন্বয়ে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজা রামমোহন রায় বাংলার সংস্কারক সতীদাহ প্রথা যখন নিবারণ করতে গিয়েছিলেন তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ রোধ, বিধবা বিবাহ চালুর কথা যখন বলেছিলেন তার উপরও অত্যাচার কম হয়নি। এগুলো তো ইতিহাস।
সবশেষে মমতা বলেন, সুতরাং আমরা বারবার এই শিক্ষাই পাই। আর বারবার কেন বলি জানেন বাংলা মোদের গর্ব? কারণ বাংলার মেধা নিয়ে, বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে, বাংলার মানবিকতা নিয়ে অনেকের হিংসা আছে। কিন্তু বাংলার মানবিকতাকে সারাদেশ গ্রহণ করেছে এটা আমাদের গর্ব। ভারতর্ষের অন্যান্য প্রদেশেকে বাংলা কিন্তু কখনো হিংসা করে না, এটা বাংলার শিক্ষা,সংস্কৃতি, সভ্যতা।
Be the first to comment