মমতা সরকারের যে শিল্পবিমুখ এক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ করে বিরোধী দলগুলি, তা ঘোচাতে উঠে পড়ে লেগেছে শাসক শিবির। মুখ্যমন্ত্রী চার পুরনিগমের ফলাফলের দিনও বলেছিলেন, তাঁর এখন লক্ষ্য শিল্প আর কর্মসংস্থান। আর এই দুই লক্ষ্যপূরণের কাজ অনেকটাই সহজ হবে যদি দেউচা পাচামিতে খোলামুখ খনিটি শেষ পর্যন্ত চালু করা যায়। আর তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এখন পাখির চোখ দেউচা। আগামী মাসের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে যাচ্ছেন। নবান্ন সূত্র মারফত এমনটাই খবর। জানা গিয়েছে, ৩ মার্চ রাঙা মাটির জেলায় যাবেন মমতা। বীরভূম সফরে দেউচা পাঁচামিতেও যেতে পারেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, দেউচার খোলা মুখ কয়লা খনির জন্য, জোর করে কারও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। কেবলমাত্র যাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের জমি দিতে চাইবেন, তাঁদের জমিই নেওয়া হবে। এমনকী ক্ষতিপূরণের অঙ্কও বাড়ানোর কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এরপরও কি মন গলেছে দেউচা পাঁচামির? সাম্প্রতিককালে, একাধিকবার মিছিল – পাল্টা মিছিল দেখা গিয়েছে দেউচার মাটিতে। সিঙ্গুরের কায়দায় ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদিবাসী মহিলাদের প্রতিরোধ, আর সেই সঙ্গে গ্রামবাসীদের পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ। সব মিলিয়ে লালগড়ের ধাঁচে এক আন্দোলন ঘনীভূত হচ্ছে। পোস্টার পড়ছে মাওবাদীদের নামে। দেউচার মাটি ক্রমেই তাঁতছে। আর তার মধ্যে বিগত চার মাসে অনেক কিছুরই সাক্ষী থেকেছে দেউচার মাটি।
সোমবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তুলেছিলেন, দেউচার আন্দোলনে মদত দিচ্ছেন খাদান মালিকদের একাংশ। সূত্রের খবর, দেউচা পাঁচামির খনি বিরোধী আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সমাজও। সব মিলিয়ে আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন দেউচাবাসী। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পর কি বরফ গলেছে দেউচায়? এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, চাকরি বাড়ি যদি দেওয়া হয়, তার চিঠিপত্র কিছু তো একটা দেওয়া উচিত। কোথাও কি কিছু লিখে দিয়েছে? তা তো লিখে দেয়নি।
আবার অন্য এক গ্রামবাসী মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের পর বলেছেন, বাড়ি দিলেও কাজ তো করে খেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যদি চাকরি দেন তাহলে আরও ভালো। তাঁর বক্তব্য, যদি বাড়ি এবং চাকরি পাওয়া যায়, তাহলে জমি ছেড়ে দিতে সমস্যা নেই। সব মিলিয়ে দেউচার মাটিতে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলছে। উল্লেখ্য, দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি এলাকায় যাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে চান, তাঁরা মঙ্গলবার সিউড়িতে এক সম্মতিপত্রে সই করেন। ডিআরপিসি হলে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ও জমিদাতারা। এদিকে আগামিকাল অর্থাৎ, বুধবার দেউচা প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০০ জনকে চাকরি ও চেক দেবে রাজ্য সরকার। তাদের মধ্যে ৫০ জনকে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চাকরির চিঠি ও চেক দেবেন। বাকিদের বীরভূমের প্রশাসনিক আধিকারিকরা দেবেন।
Be the first to comment