ভোরের আলো ফোটার আগেই শেষ করতে হবে চেক বিলি, ঘুম উড়লো থানার ওসিদের; পড়ুন!

Spread the love
ভোরের আলো ফোটার আগেই শেষ করতে হবে চেক বিলি। তাই বুধবার রাত মোটের উপর নির্ঘুম কাটল থানার ওসিদের। কোথাও গাড়ি করে থানার ওসি স্বয়ং চেক হাতে পৌঁছে গেলেন পুজোমণ্ডপে। কোথাও আবার রাতেই জেলার পুলিশ লাইন থেকে চেক নিয়ে যেতে বলা হল পুজো উদ্যোক্তাদের। রাতভর এ ছবি নজরে এসেছে উত্তর থেকে দক্ষিণ রাজ্যের সর্বত্রই।
পুজো কমিটিগুলিকে সরকারি অনুদান মামলায় বুধবার দুপুরেই কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় অনুদানের সরকারি সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না কোর্ট। ফলে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায় একরকম। কিন্তু একই সঙ্গে ওই জনস্বার্থ মামলা দায়েরকারীরাও জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবার সকালেই এর বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। তাই অনুদান বিলির জন্য সাকুল্যে হাতে ছিল শুধু রাতটুকুই। আর সে সুযোগ কোনওভাবেই যাতে হাতছাড়া না হয় তার জন্য আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমেছিল প্রশাসন।
হাইকোর্টের রায় ঘোষণা পরই বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চেক বিলি করলেন পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন থানার ওসিরা। বর্ধমান শহরের পুলিশ লাইন থেকেও পুজো উদ্যোক্তাদের চেক তুলে দেওয়া হয়। রাত জেগে ক্লাবগুলিকে আর্থিক অনুদান পৌঁছনোর কাজ শুরু করে দেয় জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশও। জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আমরা জেলার ৪৩০টি পুজো কমিটির হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা-সহ ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দিচ্ছি। আজ রাতেই আমরা এই কাজ শেষ করব।  মোট ৪৩ লক্ষ টাকা বিলি করছি।” হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পরই পুলিশ কর্তাদের নির্দেশে গভীর রাতে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার হেমতাবাদ এর মতো থানাগুলো বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যদের হাতে সরকারের অনুদান ১০ হাজার টাকার চেক পৌঁছে দেয়। কয়েকটি থানায় অনুদানের টাকা পৌঁছেছে আজ সকালে। তারপরেই শুরু হয় তৎপরতা।
পূর্ব মেদিনীপুরেরও সমস্ত থানা থেকে শুরু হয় চেক বিলি। জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ন’টা থেকে নথিভুক্ত পুজো কমিটিগুলিকে চেক নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোন করা হয়। এরপর একে একে সমস্ত পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা থানায় হাজির হয় এবং তাদের চেক নেয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই প্রক্রিয়া। হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, সর্বত্রই রাতভর থানাগুলো ছিল জমজমাট। কোচবিহারেও কিছু পুজো কমিটির চেক বিলি হয়েছে আগে। বাকিদেরও কাল রাতেই থানায় ডেকে চেক দিয়ে দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব জানান, এ দিন রাতে মোট ৩১৭টি ক্লাবকে পুজো অনুদানের টাকা দিয়েছেন তাঁরা।
নেতাজি ইন্ডোরে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে সরকার ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে। এরপরই গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরের সৌরভ দত্ত এবং আইনজীবী দ্যুতিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অনুদানের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা করেন কলকাতা হাইকোর্টে। প্রথম শুনানির পরই ওই মামলায় আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় চেক বিলি করা যায়নি। এই মামলা আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না তা জানানোর কথা ছিল গতকাল। এ দিনই আদালত জানিয়ে দেয় কোর্ট এ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু সরকারকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে ঠিকভাবে টাকা খরচ করা হয়। তাই কার্যত মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায় এ দিন।
ভোরের আলো ফোটার পরেও যখন বিভিন্ন থানায় চেক বিলি চলছে তখনই আইনজীবী শামিম কাজীকে উড়ানে দিল্লি রওনা করিয়ে দিলেন সৌরভ বাবু। এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন ফাইল করবেন তিনি। সৌরভবাবু বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের পর এ বছরের মতো হয়তো বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে পারল সরকার। রাতভর চেক বিলিও হল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি বিষয়টায় ঢোকে তবে নিশ্চিত অন্য ভাবে ভাববে, এই বিশ্বাস আমরা রাখি। কারণ বিষয়টি যতটা অর্থনৈতিক তার থেকেও অনেক বেশি নৈতিকতার।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*