জোটের প্রশ্নে ফের কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপিকে হটাতে যে চটজলদি সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, কংগ্রেসের তা নেই বলে মন্তব্য করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, নাম না করে রাহুল গান্ধীকেও বিঁধলেন মমতা। গোয়ায় শুধু তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হল, দলের ব্যানারে কালি লাগানো হল, অথচ রাহুলকে কোনও রকম বিরোধিতায় পড়তে হল না কেন, প্রশ্ন তুললেন তিনি। মুখে বিরোধিতা করলেও, তলে তলে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে আঁতাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেত্রী।
সোমবার জানবাজারে কালীপুজোর উদ্বোধন করেন মমতা। সেখান থেকেই কংগ্রেসকে একহাত নেন তিনি ৷ বলন, ‘‘কংগ্রেস যতই ফোঁস-ফাঁস করুক. বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে সব আসনে লড়বে, আর আমরা অন্য জায়গায় ওদের সমর্থন করে চলব! কী করে আশা করে? সব জায়গায় একই নীতি খাটবে, আলাদা নয় ৷ এক সময় কংগ্রেস করতাম ৷ কেন ছেড়ে চলে এসেছিলাম জানেন ৷ কারণ ওরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ৷ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে! অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি ৷ মানুষ আমাদের সাহায্য করেছেন ৷ মানুষের সাহায্যে পরপর তিনবার সরকার গড়তে পেরেছি ৷’’
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়েই এই মুহূর্তে কংগ্রেসের উপর চটে রয়েছে তৃণমূল ৷ তাদের দাবি, হাতে সময় থাকতে জোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বারবার কংগ্রেস নেতৃত্বকে আর্জি জানানো হয়েছে ৷ কিন্তু ঢিলেমি করেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস ৷ তাই তাদের উপর ভরসা না করে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন মমতা ৷ ত্রিপুরা এবং গোয়ায় দলের তরফে তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এমন পরিস্থিতিতে মমতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷
এদিন তা নিয়েও মুখ খোলেন মমতা ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এখানে কংগ্রেসকে সাহায্যই করেছিলাম আমরা ৷ সরকার গড়ার পর একসঙ্গে কাজ করতেও ডেকেছিলাম ৷ কিন্তু মাঝপথে ওরাই হাত ছেড়ে চলে যায় ৷ রোজ রোজ গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছিল বলেই ইউপিএ ছেড়েছিলাম ৷ কাউকে না কাউকে, কখনও তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে ! আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাই পদত্যাগ করে চলে আসি ৷ ওরা পারে না ৷ তাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু সিপিএমের হাত ধরে ৷ ন্যূনতম প্রকল্পের আওতায় আমরা এনডিএয়ের সঙ্গে সরকার গড়েছিলাম ৷ কিন্তু বলে রেখেছিলাম, অন্য ধর্মকে আঘাত করা যাবে না ৷’’
সিদ্ধান্তহীনতার পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা ৷ সম্প্রতি তিনি গোয়ায় থাকাকালীনই সেখানে দলের হয়ে প্রচারে যান রাহুল ৷ সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেস কোনও লড়াই করেছে ? শুধু নির্বাচন এলে বড় বড় কথা ৷ সব জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা ৷ কারণ কংগ্রেসের উপর নির্ভর করা যাবে না ৷ ওরা আপস করে, আমরা করি না ৷ মরে গেলেও বিজেপিকে শক্তি বাড়াতে দেব না আমরা ৷ আসলে সমাজে দু’ধরনের মানুষ হয়, না খেতে পেলেও মাথা নীচু করে না এক দল ৷ বরাভয়, নির্ভয় ৷ এদের সাহসী বলে ৷ আর এক ধরনের মানুষ থাকে, যারা ইহা-উহা দু’দিকেই আছে ৷ উপর উপর বিরোধিতা ৷ ভিতরে ভিতরে বোঝাপড়া ৷ তাই বছরের পর বছর বিজেপিকে ছেড়ে গিয়েছে কংগ্রেস ৷ তাই আমাদের ছুটতে হচ্ছে ৷’’
গোয়া সফরের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে রাহুলকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘‘যারা পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়ায়, ত্রিপুরায় গেলে মাথা ফাটায়, অসম-উত্তরপ্রদেশে ঢুকতে দেয় না, তাদের বিদায় দিতে হবে ৷ গোয়ায় আমাকে কালো পতাকা দেখাচ্ছিল ৷ আমাদের ব্যানার ছিড়ে দিয়েছিল, কালি মাখিয়েছিল ৷ আমাকে দেখে গো ব্যাক স্লোগানও দিচ্ছিল কয়েক জন ৷ আমি কিন্তু নমস্কার জানিয়েছি। আর মনে মনে বলেছি, আমি যাব না, তোমাদের বিদায় দেব ৷ একটি বাজারের কাছে কয়েক জন মূর্তিমান দাঁড়িয়েছিল ৷ আমাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাবে বলে পুলিশ গাড়ি ঘোরাতে চাইছিল ৷ কিন্তু আমি ঘোরাতে দিইনি ৷ অথচ অন্য এক নেতা বিরাট কনভয় নিয়ে ওই সময়ই গোয়া গেলেন ৷ তাঁকে ঘিরে কোনও বিক্ষোভ হল না ৷ কোনও কালো পতাকা দেখানো হল না তাঁকে ৷’’
কালীপুজোর মঞ্চ থেকে এদিন শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তাও দেন মমতা ৷ মমতার কথায়, ‘‘উৎসবের দিনে সমস্ত মিথ্যার অবসান ঘটুক ৷ যারা কুৎসা রটায়, অপপ্রচার করে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক ৷ রক্ত নিয়ে দোল খেলা বন্ধ হোক ৷ শান্তি, সম্প্রীতি এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ের নীতি নিয়ে যেন চলতে পারি আমরা ৷ আর সেই পথেই এগোব ৷’’
Be the first to comment