২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে মঙ্গলবার শহরে চাঁদের হাট। সলমন খান, শত্রুঘ্ন সিনহা,সোনাক্ষী সিনহা, মহেশ ভাট, অনিল কাপুর… কে নেই! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে আলো ঝলমলে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হল কলকাতায়। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতেই ‘ভাইজান’ সলমন, মহেশ ভাট, শত্রুঘ্ন সিনহাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
মমতা এদিন বলেন, বাংলার মানুষ সিনেমাকে ভালবাসেন। সিনেমার কদর করতে জানেন। তাই গৌতমদা থেকে শুরু করে, সন্দীপ রায়, অঞ্জন দত্ত, দীপঙ্কর দা, সব্যসাচী দা, মাধবীদি, প্রসেনজিৎ, দেব, সোহম, শ্রাবন্তী, কোয়েল, নুসরত… সবাই উপস্থিত রয়েছেন। সব সিনেমাপ্রেমী মানুষ আজ এখানে উপস্থিত রয়েছেন। আমরা মনে করি, বাংলায় যেভাবে সিনেমা এগিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সিনেমার ভাষা বিশ্বজনীন। রাষ্ট্র-ধর্ম-জাতির ঊর্ধ্বে উঠে সিনেমার ভাষা সকলকে স্পর্শ করে যায়। বাংলা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। সত্যজিৎ রায়, ঋত্ত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদানের কথা আমরা কখনও ভুলতে পারি না। সিনেমার ভাষা সর্বজনীন, বিশ্বজনীন ও সর্বকালীন। বাংলা ভীত নয়। আমরা ভারতকে ভালবাসি। আমরা মুম্বইকে ভালবাসি। আমরা সব ধর্ম, সব জাতির মানুষকে ভালবাসি। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালবাসি। যাই হয়ে যাক, কেউ আমাদের ভাগ করতে পারবে না। আমরা মানবিকতার পক্ষে।
মমতা বলেন, সৌরভ আমার ভাইয়ের মতো। এখন ও বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। আমরা এবার অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানকে মিস করছি। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অমিতাভজির শরীরটা ভাল নেই। আর শাহরুখ ভাই তাঁর মেয়ের সিনেমার প্রোমোশনের জন্য একটু ব্যস্ত আছেন। আমরা টলিউড থেকে বলিউড সবাইকে ভালবাসি। বাংলা অনেক তারকাকে তৈরি করেছে, যাঁরা মুম্বইয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাঙালিরা অনেক প্রতিভাবান ও সৃজনশীল। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলার চলচ্চিত্র জগতকে একটি সৃজনশীল ইন্ডাস্ট্রি (ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি) হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন একটি ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এখানে আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। আরও বেশি শিল্পী তৈরি হচ্ছে। অনেক মানুষকে কাজের সুযোগ দিচ্ছে বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
সলমন খান, অনিল কাপুর, মহেশ ভাটদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি বাংলাকে ভাল কিছু দিতে চান… তাহলে বাংলায় এসে কিছু সিনেমা বানান। এখানে এত ভাল ভাল জায়গা আছে। এটাই এখন ডেস্টিনেশন। মুম্বইয়ের ইন্ডাস্ট্রির জন্য এখন বাংলাই ফিল্ম ডেস্টিনেশন। দার্জিলিং, কালিম্পং, কালিম্পং, মিরিক, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমান, আসানসোল, হাওড়া, সুন্দরবন, গঙ্গাসাগর… কত জায়গা আছে। আপনারা যেখানেই যাবেন, দেখবেন সব পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। আপনারা আসুন, বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেও কাজ করুন। আপনাদের কাছে অনুরোধ, বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে প্রোমোট করুন। মমতার অনুরোধের পর সলমনও জানালেন, তিনি আগামী দিনে বাংলায় শুটিংয়ের জন্য আসবেন। বলিউড সবসময় টলিউডের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। টলিউডও সবসময় বলিউডের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। তাই আপনাদের এখানে আসতে হবে। সিনেমা বানাতে হবে। যদি কখনও কোনও দরকার হয়, মনে রাখবেন, বাংলাই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সুরক্ষা, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সবরকম সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারে বাংলা।
আগামী বছরের চলচ্চিত্র উৎসবেও আসতে হবে। ভাইফোঁটাতেও আসতে হবে। বেঁচে থাকতে গেলে, আদর্শের সঙ্গে লড়তে হবে। স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে লড়তে হবে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। আপনাদের কখনও দরকার পড়লে, আমাদের ডাকবেন। আমরা চলে যাব। আমাদের যখন দরকার পড়বে, তখন আপনারাও অবশ্যই আসুন। বাংলার মতো অতিথি পরায়ণ আর কেউ নেই। বক্তব্যের শেষে নিজের আঁকা একটি ছবি সলমন খানকে উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment