রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে এবার শিল্পকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার পানাগড়ে পলিফিল্ম কারখানার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন, ‘দুয়ারে সরকার সহ একাধিক সামাজিক প্রকল্পে সাফল্য পেয়েছে রাজ্য। এবার আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন শিল্প।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী একগুচ্ছ নতুন শিল্পের ঘোষণা করেন। দেউচাপচামিতে বিদ্যুৎ উদপাদন, তাজপুর বন্দর এবং ডানকুনি থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের ঘোষণা করেন। তাঁর আশ্বাস এই তিন শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘দেশে যখন কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে, রাজ্যে তখন ৪০% কর্মসংস্থান বেড়েছে।’
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেউচাপচামি এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ উদপান কেন্দ্রের ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল মাইন এখানেই তৈরি হবে। এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উদপাদন শুরু করে আগামী ১০০ বছরেও বাংলায় বিদ্যুতের অভাব হবে না।’ আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম কমানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। তিনি জানান, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জমি সরকারের কাছেই আছে। ফলে চাকরি দেব, স্কুল-কলেজ, জল, রাস্তা, হাসপাতাল বাড়ি সব করে দেব। তিনি জানান, মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে এই প্রকল্পে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থানেরও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি তাজপুরেও খুব তারাতারি বন্দর তৈরি হয়ে যাবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, ‘ডানকুনি থেকে পানাগড় হয়ে রঘুনাথপুর পর্যন্ত একটি ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরি হবে। এই করিডর যুক্ত করা হবে অমৃতসরের সঙ্গে। রঘুনাথপুর এস্টেটেও লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে বলে খবর। সেখানে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে জঙ্গলমহল সুন্দরী।’
পাশাপাশি রাজ্যে ডেটা সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করার হবে বলেও এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন ডেটা ইন্ডাস্ট্রি নাীতিতে রাজ্যের নতুন লক্ষ্য তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং সংগ্রহের হাব হিসেবে বাংলাকে গড়ে তোলা। যাতে পূর্ব ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভূটানেরও তথ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা বাংলা মেটাতে পারে। ডেটা সেন্টারগুলিকে সবরকম সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। অনুমোদন থেকে শুরু করে সহজ শংসাপত্র পাওয়ার ব্যাপারেও সাহায্য করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৪০০ মেগাওয়াটের ডেটা সেন্টার তৈরি হবে বাংলায়। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ২৪ হাজার চাকরি হবে।’ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘বাংলায় বিনিয়োগ করুন। আমাদের সরকার শিল্পের পাশে আছে। এ রাজ্য শিল্পে এক নম্বর হবে।’
অন্যদিকে রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্ডাল বিমানবন্দর নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন। তিনি জানান, আগামী দু’বছরের মধ্যে অন্ডাল বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার আশ্বাস দিলেন তিনি। পানাগড়ের সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একথা বলেন তিনি।
রাজ্যে ইথানল তৈরির শিল্প গড়ে ওঠার কথা জানালেন মমতা। এতে বিনিয়োগ হবে ১৫০০ কোটি টাকা। মমতা বন্দ্যেপাধ্য়ায় এদিন বলেন, ‘রাজ্যে ইথানল তৈরিতে গুরুত্ব দেবে রাজ্য সরকার। এই জৈব জ্বালানি আমাদের পেট্রল, ডিজেলের চাহিদা কম করবে। প্রায় অর্ধেক দামে ওই জ্বালানি পাওয়া যাবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙা চাল থেকে ইথানল তৈরি হয়। ফলে ওই ভাঙা চাল কৃষকদের থেকে কিনে নিলে তাঁরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
এছাড়াও ক্ষুদ্র শিল্পে হাস-মুরগি প্রতিপালনে পোলট্রি শিল্পে উৎসাহ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সরকার ভর্তুকি দেবে। ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে। ফলে পোলট্রির ব্যবসা শুরু করুন। বাইরে থেকে ডিম আমদানি করতে হবে কেন? স্বনির্ভর হন।’
Be the first to comment