দুর্গাপুজোকে ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। দুর্গোৎসবের মুকুটে এই পালক যোগের পরই আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার কলকাতায় আয়োজন করা হয়েছিল পদযাত্রার। জোড়াসাঁকো থেকে শুরু হয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে সেই শোভাযাত্রা পৌঁছয় রেডরোডে। সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধি-সহ রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠান শেষে বক্ততা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিতে বলেন সেখানে উপস্থিত সকলকে। পাশাপাশি ঐকের বার্তাও শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। দুর্গাপুজোকে ঘিরে যে বিপুল আর্থিক লেনদেন এবং ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়, সে বিষয়টিও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এ বছরের দুর্গাপুজোর সূচনা হল বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “আজ থেকে পুজো শুরু হয়ে গেল। ঢাকের বাদ্যি শুরু হয়ে গেল।” এর পর নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ছন্দ মিলিয়ে বলেন, “টাকডু মাডুম টাকডু মাডুম, টাকডু মাডুম ডুম/ মা দুর্গা ঘরে এসেছে তাই তো এত ধুম। আনন্দের মধ্যে দিয়ে পুজো শুরু হল। যে যেমন ভাবে পারুন আনন্দ করুন। হৃদয়কে বড় করুন।“
দুর্গাপুজোয় ব্যবসা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ব্রিটিশ কাউন্সিল ও খড়গপুর আইআইটি-কে দিয়ে সার্ভে করিয়েছিলাম। ৪০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় পুজোকে কেন্দ্র করে। গরিব, মধ্য়বিত্ত, হেল্ফ সেলফ গ্রুপ সবাই জড়িয়ে থাকে।“ বাংলার দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেছেন, “ধর্ম সবার নিজের। কিন্তু উৎসব সবার। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ জৈন, কেউ বৌদ্ধ। কিন্তু উৎসব সবার। আমাদের একটাই ধর্ম মানবতা। ঐক্য আমাদের শক্তি। আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
বিশ্ব ভাতৃত্ববোধের বিষয়টিতেও বৃহস্পতিবার জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশ-সীমানার ভেদ ঘুচিয়ে দেওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “মানবতা আমাদের সম্পদ। ঐক্য পৃথিবীকে বলি এই পৃথিবী একটা দেশ। কেউ বলবে রাশিয়া, কেউ বলবে আমেরিকা, কেউ বলবে ইংল্যান্ড, কেউ বলবে ইউক্রেন, কেউ বলবে সুইজারল্যান্ড, কেউ বলবে ফ্রান্স- কিন্তু মনে রাখবেন একটাই জাতি আমরা। আমরা মানুষ। মানবতা আমাদের ধর্ম।” সেই মানবতাকে যে কোনও মূল্যে রক্ষা করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
এরপরই ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের স্যান্ডিং ওভেশন দেওয়া হয়। তাঁদের বার বার বাংলার আসার জন্যও আমন্ত্রণ জানান তিনি। এ দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মমতা। বলেছেন, “সৌরভ আমার ছোট ভাই। ওকে ধন্যবাদ ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করে অনুষ্ঠানে এসেছে।”
Be the first to comment