SSKM হাসপাতালের ৬৭তম বর্ষপূর্তিতে গিয়ে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার, সাড়ে চারটে নাগাদ সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি হাসপাতালের সিনিয়ার-জুনিয়ার চিকিৎসক, নার্সদের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। “অনেকে ভাবে শুধু টাকা। অনেকে কমিশনও নেন। জোর করে পেসমেকার বসাতে হয়। ICU-তেও বডি রেখে বিলও বাড়ানো হয়। সব খবর আসে আমার কাছে। আবার অনেক ভাল হাসপাতালও আছে। যারা হাসপাতালে কাজ করেন তাঁদের থেকে বড় সমাজসেবক আর নেই। অনেক টাকার প্রয়োজন সবসময় পড়ে না।” সবাইকে নিয়ে একই সঙ্গে ভালো থাকার টিপস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম-এর চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,” SSKM-এ অঙ্কোলজি বিভাগে খুব ভালো কাজ হচ্ছে। টাটা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া ক্যানসার রোগীকেও এসএসকেএম হাসপাতাল আরও এক দেড় বছর তাঁকে জীবনের স্বাদ দিয়েছে।” একইসঙ্গে রাজ্যে আর ৬টি মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথাও বলেন তিনি। জুনিয়ার ডাক্তারদের কাজের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামে গিয়ে কিছুদিন কাজ করুন তাঁরা।
এরপরেই বাংলায় থাকার পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ”এ রাজ্যেই যদি সব কিছু পাওয়া যায় তাহলে বাইরে যাওয়ার কী দরকার?” তাঁর মতে, বাইরে যাওয়া প্রয়োজন না হলে শুধু শখ হলে মেটাতে যাওয়া ভালো না। আমারই এক ভাইঝি শিকাগোও আছে। কিন্তু আমার পছন্দ নয়।”
একাকীত্ব প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ”অনেকে আছেন বাইরে যাওয়াটা নেশা। প্রচুর আয় করলাম। কিন্তু একটা অসুখ হলে দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে, বাবা মায়েদের দিক থেকে দেখলে, জীবনের ২৫টা বছর ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে চলে গেল। আর শেষ জীবনে পড়ে রইল একাকীত্ব। কাউকে বৃদ্ধাশ্রম চলে যেতে হচ্ছে আর কারও হয়তো বাথরুমে পড়ে গেলে তুলে নিয়ে যাওয়ারও লোক নেই। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে থাকা আনন্দের না ওই জীবনটা আনন্দের আপনিই বলুন তো।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ”বাইরে ইনকাম অনেক হতে পারে, কিন্তু খাওয়া, গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া যা খরচ, তার থেকে এখানে থেকে কম খরচায় ভালো জীবন কাটানো সম্ভব । নিজে হিসেব করুন না, কলকাতায় এক লাখ টাকায় ডুগডুগি বাজিয়ে আমি ভালো জীবন কাটাতে পারব। বেশি খেলেও খরচা হয় না। মা ক্যান্টিন আছে। ফ্রি রেশন আছে। ফ্রি চিকিৎসা পরিষেবা আছে। অনেক সুবিধে। সব থেকে বড় পরিবারের সবার সঙ্গে মিশে থাকার আনন্দ আলাদা। জীবনে বহু কোটির টাকার মালিক হলেন, কিন্তু শারীরিকভাবে সুস্থ নন। মানসিক স্বাস্থ্য যদি আপনার ভালো না হয়, কথা বলার জন্য পরিবার না থাকে, একাকীত্ব আপনাকে গ্রাস করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে পেটে ব্যথা, দুপুরে মাথা ব্যথা, সন্ধেবেলা হৃদয়ে ব্যথা, রাতে ঘুমে ব্যথা, এগুলি কি আপনাকে ভালো জীবন দেবে?”
চিকিৎসকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাজ মানুষের জন্য কাজ করা। মানসিক সাহায্য করা। একটু হাসি মুখে কথা বললে কিছু তো ক্ষতি নেই। জীবনে এর থেকে বড় আর কিছু নেই। পেশেন্টদের কাছে সিরিয়াস কথা বলতে নেই। মানসিকভাবে যাতে আঘাত না পায় সেটা দেখা উচিত।”
Be the first to comment