প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে মমতা-ধনকড় দূরত্ব

Spread the love

রেড রোডে ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে মুখোমুখি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু সেই সাক্ষাৎ মোটেও মধুর ছিল না, তা দু’জনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ৷ বুধবার ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আগে আসেন ৷ তার কিছুক্ষণ পর এসে পৌঁছান রাজ্যপাল ৷ রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর একেবারে সামনে চলে আসার পর তিনি উঠে দাঁড়ান ৷ তারপর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সাংবিধানিক রীতি মেনে মেনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল ছবি তুলেছেন বটে, কিন্তু সেখানেও ধরা পড়েছে ‘অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব’। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা চাইছেন, এমন ছবিও সামান্য সময়ের জন্য ধরা রয়েছে ক্যামেরায়। তবে মুখ্যমন্ত্রী বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়ে দিয়েছে তিনি খুশি নন।

এর পর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নমস্কার জানান ৷ মুখ্যমন্ত্রীও প্রতি নমস্কার জানান ৷ ব্যাস, ওই টুকুই৷ তার পর আর রাজ্যের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রধানের মধ্যে কোনও বার্তা বিনিময় হতে দেখা যায়নি ৷ ইদানীং রাজ্য সরকার ও রাজভবনের মধ্যে সম্পর্ক যেভাবে আদায়-কাঁচকলায় পরিণত হয়েছে। তার থেকেই এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । মিনিটখানেকের সাক্ষাতে দু’জনের শরীরী ভাষাতেই ধরা পড়েছে মঙ্গলবারের ঘটনার অভিঘাত । যেভাবে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যপাল একহাত নিয়েছিলেন, তাতে এমনটাই স্বাভাবিক মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।

https://www.facebook.com/MamataBanerjeeOfficial/posts/5113752595358707

অন্যদিকে বিতর্ক পিছনে ফেলে ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে রেড রোডে প্রদর্শিত হল নেতাজির ট্যাবলো । দিল্লি এবং কলকাতার দুই জায়গাতেই প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে নেতাজির ট্যাবলো দেখা গিয়েছে । তবে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্র-রাজ্য যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল নেতাজির এই ট্যাবলোকে কেন্দ্র করে, অবশেষে বুধবার সেই বিতর্কের শেষ হল । রেড রোডে শোভা পেল রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে উপস্থাপিত নেতাজি ট্যাবলো ।

এদিন আগেই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে নিজের সোশ্যাল সাইট থেকে রাজ্যবাসীকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রজাতন্ত্র দিবসে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই দিনে, আসুন আমরা আবারও ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামো, বিশেষত এর ফেডারেল চরিত্র রক্ষা করার শপথ নিই। আসুন আমরা আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের আদর্শ রক্ষা, সংরক্ষণ এবং অনুসরণ করার জন্য সচেষ্ট হই, যা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার দেয় । আমি আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং জওয়ানদের অভিবাদন জানাই যাদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ এবং তাদের নিঃস্বার্থ দায়িত্ব আমাদের দেশকে রক্ষা করে এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে । আমাদের গণতন্ত্রের স্তম্ভ সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন । জয় হিন্দ ।’’

এরপর সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি পৌঁছন রেড রোডে । অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করেন । এরপর মহামান্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে রেড রোডে স্বাগত জানান । এবার করোনা আবহে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন মাত্র ৩০ মিনিটে সম্পন্ন করা হয়েছে । তবে এই ৩০ মিনিটের সুযোগেই সেনাবাহিনীর একাধিক সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে । একই সঙ্গে স্থল এবং নৌবাহিনী বিভিন্ন শাখা রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকারকে অভিবাদন জানিয়েছে ।

এদিনের কুচকাওয়াজের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল জয়তু নেতাজি নামক রাজ্য সরকারের ট্যাবলো । এবার নেতাজির ১২৫তম জন্মবর্ষ । সেই লক্ষ্যেই দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলার তরফে পাঠানো হয়েছিল নেতাজি ট্যাবলো । সেই নেতাজি ট্যাবলো দিল্লির রাজপথে প্রদর্শিত করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় । বাংলার ট্যাবলো বাতিলের পর বিতর্ক শুরু হয় । নেতাজিকে অপমান বাংলাকে অপমান বলেও গর্জে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*