রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্যে সরকারের সঙ্ঘাত এবার চরমে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হলো ৷ ধনকড়কে পদচ্যুত করতে এবার সংসদে প্রস্তাব আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তৃণমূল ৷
বৃহস্পতিবার দলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ক্যাডারের মতো আচরণ করছেন ৷ এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, তা ভাবনাচিন্তা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যসভায় দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়কে ৷
অন্যদিকে সুখেন্দুশেখর রায় জানান, সাংবিধানিক কোনও পদে থাকা যে কোনও ব্যক্তিকে সেই পদ থেকে খারিজ করার প্রস্তাব সংসদে আনা যেতে পারে ৷ সংবিধান অনুযায়ী সেই সুযোগ রয়েছে ৷ রাজ্যপাল যদি নিজের ভূমিকা না বদলান, তা হলে তৃণমূল নেত্রীকে সেই প্রস্তাব দেওয়া হবে, যাতে সংসদে ধনকড়ের পদ খারিজের প্রস্তাব আনা যায় ৷
যদিও সংসদের দুই কক্ষে এই প্রস্তাব পাস করানো তৃণমূলের পক্ষে অসম্ভব ৷ বিরোধী ঐক্য তৈরি করেও তা সম্ভব নয় ৷ তাহলে এই প্রস্তাবের যৌক্তিকতা কোথায় ? রাজনৈতিক মহলের মতে, এই প্রস্তাব এনে আসলে জাতীয়স্তরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকার সমালোচনা করতে চায় তৃণমূল ৷
অন্যদিকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের মোদি সরকার মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে ব্যর্থ। আর সেই কারণেই আদর্শ বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যে ভূমিকা পালন করা দরকার, সেটাই পালন করবে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের বৈঠকে তা সকলকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে ৷
তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় নিয়ে এই বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, এক্ষেত্রে যদি কোথাও প্রয়োজন হয় বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করার, সেই সিদ্ধান্ত তৃণমূল সংসদীয় দল নেবে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ঠিকমতো কাজ করতে দিচ্ছে না। প্রতি পদে পদে তারা বাধা সৃষ্টি করছে। তৃণমূল সংসদীয় দল এই বিষয়টিকে সংসদে তুলে ধরবে। রাজ্য থেকে আইএএস-আইপিএসদের তুলে নিয়ে যাওয়ার যে অভিসন্ধি কেন্দ্রীয় সরকার করছে, তার বিরুদ্ধেও সংসদে সরব হবে তৃণমূল কংগ্রেস।
এদিন লোকসভা অধিবেশনের সময়সীমা নিয়েও কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন উত্তর কলকাতার সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন পর্যন্ত লোকসভা বসত সকাল ১১টা থেকে। এবার বাজেট অধিবেশনে অধিবেশন বসবে বিকেল চারটে থেকে। কেন্দ্রীয় সরকার সবকিছুতেই বদল আনার চেষ্টা করছে । বিকেল চারটে থেকে অধিবেশন দিল্লির ঠান্ডায় ক’টা পর্যন্ত চলবে ৷ আমরা সমস্ত কিছু নিয়েই কেন্দ্রের ভূমিকা প্রতিবাদ করব।
অন্যদিকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন উপলক্ষে সমস্ত সাংসদদের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। যেহেতু তাঁদের ভোটাধিকার রয়েছে, তাই তাঁরা এই বিশেষ দিনে কলকাতায় থাকবেন। রাজ্যসভা এবং লোকসভার ক্ষেত্রে দলনেত্রী নির্দিষ্ট কয়েকজনকে ঠিক করে দিয়েছেন, যারা সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন বর্ষীয়ান সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এবং জহর সরকার । অন্যদিকে লোকসভায় উপস্থিত থাকবেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায় । বাকিরা সকলেই সাংগঠনিক নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কলকাতায় থাকবেন বলে জানা গিয়েছে ।
Be the first to comment