জীবন বিপন্ন করে তুলেছে করোনা ভাইরাস। প্রতিদিনই সারা বিশ্বের মতো এ রাজ্যেও বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ রুখতে সারা দেশের সঙ্গে পা মিলিয়ে গৃহবন্দি হয়েছে বাংলাও। এদিকে রাত পোহালেই বাঙালির নববর্ষ। কিন্তু বাংলার সেই প্রাণের উৎসবের আনন্দ এবার লকডাউনের ফাঁসে অবরুদ্ধ। রাজ্যের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী চিন্তিত তাঁর ‘ভাইঝি’ও। তাই ন’বছরের এই খুদে নিজের স্বল্প সঞ্চয় এবং নববর্ষের পারিবারিক উপহারের মূল্য তুলে দিল তাঁর ‘পিসিমণির’ ত্রাণ তহবিলে। এর সঙ্গেই প্রণাম জানিয়ে নিজের কচিকাঁচা হাতে লিখে পাঠাল আস্ত একটা চিঠিও।
একরত্তি মেয়েটি যখন বাবা মায়ের হাত ধরে হুগলির জেলাশাসকের দফতরে ২১০০ টাকার একটি চেক নিয়ে হাজির হয়, তা দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলেন পোড় খাওয়া আইএএস ওয়াই রত্নাকর রাও। ন’বছরের ত্রিজিতা সিংহর মুখে তখন একঝলক খুশির হাসি। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন মনে হল তাঁর? ত্রিজিতা জানিয়েছে, প্রতি নববর্ষেই তাঁকে নতুন জামা দেন তাঁর বাবা-মা। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের থাবায় যে তাঁর রাজ্যও বিপদে তা বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি ন’বছরের ত্রিজিতার।
নিজের মেয়ের কান্ড শোনালেন বাবা সৌমিত্র সিংহ। তিনি বলেন, “আমি আর ওর মা জামা কিনে আনার পর দেখি মেয়ের মুখ ভার। একটাই কথা বলছে, এ বছর আমার নতুন জামা চাই না। বহু মানুষ অসহায়। এ বছর নতুন জামা নাই বা হল। তবে কীভাবে ওর জমানো টাকা অসহায় মানুষদের দেবে তা নিয়েই প্রশ্ন করতে থাকে।” অগত্যা জামা ফেরত দিয়ে আসেন সৌমিত্র। কিন্তু মেয়ের মন বুঝতে দেরি হয়নি তাঁর। আর তখনই হুগলির জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৌমিত্রবাবু।
ত্রিজিতার নিজের ভাঁড়ে জমানো দু’হাজার একশো টাকা চেকের মাধ্যমে জমা দেন জেলা শাসকের কাছে। আর্জি একটাই, তাঁর এই টাকা দিয়ে করোনায় যারা অসহায় তাঁদের যেন ‘পিসিমনি’ ওষুধ ও খাওয়ার কিনে দেন। এক্ষেত্রে জেলাশাসক কেবলই মাধ্যম। আসলে গোটা বিষয়টিই পিসি-ভাইঝির নিজেদের মধ্যে।অভিধান বলছে, ত্রিজিতা শব্দের অর্থ ত্রিভুবন জয় করেছেন যিনি! তবে ত্রিভুবন কিনা জানা নেই, কিন্তু এই ছোট্ট নাগরিক যে তার সচেতনতা দিয়ে অনেকের মনের ভূবনই জয় করবে সে বিষয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই।
Be the first to comment