নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা বিজয়ের দুই ধাত্রীভূমি। সেই নন্দীগ্রামেই যখন অন্তিম যুদ্ধ সমাগত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ ঝড় তুলতে চাইলেন সিঙ্গুর-সংলগ্ন গোঘাট থেকে। বার্তা দিতে চাইলেন সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম- তাঁর নয়নের দুই মণিকেই। বিজেপিকে মমতার তোপ বেসরকারিকরণ নিয়ে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি থেকে নিয়ে। নন্দীগ্রামে অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ল চোখেমুখে। তিনি শঙ্কিত নিজের নিরাপত্তা নিয়েও।
বিজেপিকে মমতা এ দিন শুরুতেই ঠেস দিলেন ‘সোনার বাংলা’ সংকল্প নিয়ে, কারণ পশ্চিমবঙ্গের নাম প্রাথমিক ভাবে বাংলা করার প্রস্তাব ছিল তাঁরই। মমতা বলেন, “সুনার বাংলা বলছে, সোনার বাংলাও বলতে পারে না। বাংলা নামটা বাংলা চেয়েছিলাম, বাংলাকে এরা আসলে ঘৃণা করে। তুমি চিরকাল থাকবে না। বাংলার নাম বাংলা হবেই।”
নন্দীগ্রামে প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। মমতা এ দিন নন্দীগ্রাম ছাড়ার সময়েই বলেন, “বহিরাগতরা নন্দীগ্রামে ঢুকছে৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করা হোক। গোকুলনগর, বয়াল, বলরামপুরে বহিরাগত ঢুকছে ৷ বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকে অশান্তি করেছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গোঘাট থেকেও মমতা সেই প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। বললেন, “কালকেও নন্দীগ্রামে ঝামেলা করেছে। গদ্দারদের খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছি। দুধকলা দিয়ে কেউটে ,সাপ পুষেছি। মানুষ যাকে পছন্দ করবে ভোট দেবে। অশান্তি করা কেন” বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, মূল অভিযোগটা শুভেন্দুর দিকেই। ক্রমেই তা আরও ধারালো হল। মমতা অভিযোগ করলেন, একবার তাঁর এতবড় দুর্ঘটনা ঘটার পরেও মঙ্গলবার বারংবার তাঁর গাড়িতে ধাক্কাধাক্কি বলেও কমিশন নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে। নন্দীগ্রামে বহিরাগত যোগ সম্পর্কে মমতার উবাচ, “বিহার থেকে বন্দুক পাঠিয়েছে। ইলেকশান কমিশনকে বলে বলে গলা ব্যথা হয়ে গিয়েছে।”
মমতার অভিযোগ, মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের বয়াল অঞ্চলে রাতজুড়ে ভয় দেখিয়েছে বহিরাগত গুণ্ডারা। উঠে এলো রবীন মান্না প্রসঙ্গ। অভিযোগ এই তৃণমূলকর্মীর ওপর প্রাণঘাতী হামাল চালায় বিজেপি। মমতা মঙ্গলবার তাঁর বাড়ি যান। তিনি সেই প্রসঙ্গে বলেন, বলরামপুরে আমার ছেলেকে এমন মেরেছে সে বাঁচবে কিনা জানি না। আমার স্বামীকে ভিক্ষে দাও বলে শাড়ির আঁচল।
অবশ্য এই প্রতিকূলতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন না মমতা। বলছেন স্বচ্ছ ভোট বলে নন্দীগ্রাম তাঁর। পাশাপাশি বলছেন, নির্বাচন চলছে বলে চুপ করে আছি, ইলেকশানটা হোক, সব উত্তর দেবো। দেখব কোথায় যাবে, কিছুতেই ছাড়া পাবে না। অভিমুখটা কোন দিকে তা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।
Be the first to comment