এবার কি তবে আরব সাগরের তীরে তৃণমূল সুপ্রিমোকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানালেন আম আদমি পার্টির প্রধান? গোয়ার জন্য যে ১৩ দফা দাওয়াই দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তাতে অন্তত তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে গোয়ার ৪০টি বিধানসভা আসনে ৷ সেই লড়াইয়ে যত বেশি সম্ভব ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তার জন্য চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছেন না তিনি ৷ আর এবার সেই মাটিতে দাঁড়িয়েই গোয়া নিয়ে তাঁদের স্বপ্নের পরিকল্পনার কথা জানালেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ৷
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লি জয় কোনও অভিযান কাহিনির থেকে কম রোমাঞ্চকর নয় ৷ সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর অন্তত পরিষেবা ক্ষেত্রে ভালই কাজ করেছেন তিনি ৷ অন্যদিকে, বাংলার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবথেকে শক্তিশালী নাম অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এই দুই নেতা-নেত্রীই বিজেপি বিতারণের কথা বলেন ৷ এবং সেই কাজে দু’জনের কেউই কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেন না ৷ এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্য, দক্ষিণ ভারত এবং গোয়াতেও সংগঠন বিস্তারের কাজে মন দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ হাতগুটিয়ে বসে নেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ৷ আসন্ন পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল লড়ছে ৷ এমনকী, সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে জনতার পছন্দ জানতে চেয়ে কেজরিওয়াল যে মোবাইল নম্বর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিয়েছেন, তাতেও ভাল সাড়া মিলেছে ৷
এই অবস্থায় রবিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কেজরিওয়াল জানান, আগামী দিনে তাঁদের দল গোয়ায় সরকার গড়লে 18 বছর ও তার বেশি বয়সী সমস্ত মহিলাকে 1 হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে ৷ কর্মহীন যুবক-যুবতীরা মাসে ভাতা পাবেন 3 হাজার টাকা ৷ কেজরিওয়ালের এই ঘোষণা তৃণমূল কংগ্রেসের অতি বড় সমালোচককেও তাদের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেবে ৷ বাংলায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প বাজিমাৎ করার পর একই ধাঁচে গোয়ার মহিলাদের জন্যও ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্প চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাদের আশ্বাস, গোয়ার ক্ষমতায় এলে গৃহলক্ষ্মীর আওতায় প্রত্যেক মহিলাকে মাসে 5 হাজার টাকা ভাতা দেবে তারা ৷
এছাড়াও রয়েছে জমির মালিকানার প্রতিশ্রুতি ৷ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁদের দল সরকার গড়লে গোয়ার বাসিন্দারা তাঁদের বসত জমির মালিকানা পাবেন ৷ ক্ষমতায় আসার মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই জমির মালিকানা সংক্রান্ত নথি বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷ এই একই প্রতিশ্রুতি তৃণমূল কংগ্রেসও দিয়েছে ৷ মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি (MGP)-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেস হাজির করেছে ‘মাজে ঘর, মালকি হক’ প্রকল্প ৷ বলা হচ্ছে, পদ্ম তুলে ফেলে গোয়ার মাটিতে ঘাসফুল ফোটালেই প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের আওতায় বসত জমির মালিকানা পাবেন বাসিন্দারা ৷
সব মিলিয়ে গোয়ার জন্য ১৩ দফা প্রতিশ্রুতির বহর সাজিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ রাজধানী দিল্লিতে তাঁর ‘মহল্লা ক্লিনিক’ আর বিনামূল্যের সরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের মানোন্নয়নের ফর্মুলা চূড়ান্ত হিট ৷ ভোটে জিতে সরকার গঠন করতে পারলে গোয়াতেও সেই মডেল চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি ৷ এছাড়াও থাকছে ২৪ ঘণ্টার জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল পরিষেবা ৷ সেইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক স্তরে গোয়ার পর্যটনকে আরও উন্নত করা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাঁদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান, বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার সরলীকরণ এবং খনি শিল্পে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেজরিওয়াল ৷ যার সবক’টাই ইতিমধ্যে তৃণমূল তাদের ডালিতে সাজিয়ে জনতার সামনে পেশ করেছে ৷
কেজরিওয়াল এবং মমতা, দু’জনেরই বক্তব্য হল, এর আগে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে সুযোগ দিয়েছেন গোয়ার মানুষ ৷ এবার একটা নতুন দলকে সুযোগ দেওয়ার হোক সরকার গড়ার ৷ দু’পক্ষেরই দাবি, তাতেই নাকি গোয়ার কপাল ফিরে যাবে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন ৷ জাতীয় মঞ্চে বিজেপিকে নাস্তানাবুদ করতেই তিনি কোমর বেঁধেছেন বলে দাবি ৷ বস্তুত, ইতিমধ্যে মোদিবিরোধী মুখ হিসাবে মমতা নিঃসন্দেহে এক নম্বরে রয়েছেন ৷ এই প্রেক্ষাপটে গোয়ায় ভাল ফল করতে পারলে, সেটা তৃণমূলের বড় লাভ ৷ এতদিন মনে হচ্ছিল, গোয়ায় তৃণমূলের লড়াইটা মূলত বিজেপি ও কংগ্রেসের বিপক্ষে ৷
কিন্তু, এদিন কেজরিওয়াল যেভাবে নিজের পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করলেন, তাতে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, তিনি মূলত মমতার দলকে মাথায় রেখেই এই ১৩ দফা প্রস্তাব তৈরি করেছেন ৷ সেক্ষেত্রে তৃণমূল বনাম আপের লড়াই শুরু হলে আখেরে লাভ কি বিজেপি কিংবা কংগ্রেসেরই হবে না ? এর উত্তর মিলবে আগামী ১০ মার্চ ৷ ওই দিনই গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে ৷
Be the first to comment