ছবি সৌজন্যে- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক
পাহাড়ের পর্যটনের হাল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়লেন পূর্ত দফতরের অফিসাররা। বুধবার মিরিক উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে মমতা বলেন, মিরিকে কটেজ তৈরি করতে আর কতদিন লাগবে? আমাকে এগুলো বলো না যে কাজ চলছে! কবে শেষ হবে? এটা নাটক হচ্ছে না চ্যাংরামো হচ্ছে? একবার এই দফতর আরেকবার ওই দফতর? কেউ এসে থাকতে পারে না। কিছু করুন লেকটার।
লেক সংস্কারের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে তিনমাসের মধ্যে কাজ শেষের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লাভা–লোলেগাঁওয়ের উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। শৈল শহরের রাস্তার হাল, আলো নিয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন প্রশাসন ও জিটিএকে।
পর্যটনের উন্নয়নে প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঠিক মতো না হওয়ায় জিটিএ, এমনকি স্বশাসিত বোর্ডগুলিকেও কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বোর্ডের কাছে জানতে চান, কত টাকা খরচ হয়েছে বাড়ি তৈরি করতে? কে কী খরচ করেছে? কত বাড়ি তৈরি হয়েছে? তার রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী। একটা স্পেশাল রিপোর্ট তৈরি করে তাঁর কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এছাড়া সরকারি অর্থের অযথা ব্যয় নিয়ে আমলা ও প্রশাসনিক কর্তাদেরও এদিন কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কার্শিয়াংয়ে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ধমকের সুরে বলেন, সরকারটাকে নিজের মনে করুন। অযথা খরচ করবেন না। হিল ইউনিভার্সিটির খরচ নিয়ে এদিন বেজায় চটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘সরকারের টাকা কি সস্তা’?, এই ভাষাতেই বুধবার সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হিল ইউনিভার্সিটি গড়তে আনুমানিক ৩৩০ কোটি টাকা খরচের হিসেব নিয়ে এদিন সংশ্লিষ্ট অফিসারদের উদ্দেশে মমতা বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে কত টাকা লাগে? এরপরই তিনি বলেন, কে বানিয়েছে এই খরচের হিসেব? সরকারের টাকা কি সস্তা? একটা বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে কত টাকা লাগে? বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে যেন অন্য কোথাও থেকে টাকা নিতে না হয়। ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকায় বানান। আমি বড় বড় মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল বানাচ্ছি ২৫ কোটি টাকায়, আমাকে টাকা দেখাচ্ছেন!
ওই আধিকারিক বলেন আনুমানিক ৩৩০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এই শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। কার্যত ধমক দিয়ে মমতাকে বলতে শোনা যায়, একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে এত টাকা লাগে? সরকারের টাকা কি সস্তা? যে শিশুর বিয়েই হল না তার বিয়ের পরিকল্পনা করে নিলেন? সরকারকে একটু নিজের ভাবুন।
এই রকম প্রশাসনিক বৈঠকে অত্যধিক টাকা খরচের বিরুদ্ধে বারবার সরব হতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর আগেও বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। আমলা থেকে সাংসদ, বিধায়ক অত্যধিক খরচের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ধমক থেকে বাদ যাননি কেউই। কাটমানি নিয়েও এই দিন সরব হতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এই সভাতে প্রশাসনিক কর্তাদের কড়া ভাবে তিনি বলেন, কে কোথায় লোকালি ফোর্স করছেন সে ব্যাপারে নজর রাখবেন। অনেক কন্ট্রাকট্যারই আছেন যারা এত টাকা দিতে হবে বলে চলে যান, সেইরকম যেন না হয়।
Be the first to comment