কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ‘ক্যাডার রুলস’ সংশোধনের প্রতিবাদে সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি জানালেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। সম্প্রতি ১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) আইনে সংশোধন আনার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিপন্ন হওয়ারই সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজ্যগুলি কারণ, এই আইন সংশোধন করে কেন্দ্র সমস্ত আমলাদের নিজেদের হাতে নিতে চাইছে বলেই খবর রাজ্যের কাছে।
এই বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য এসে পৌঁছেছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। সেখানে এই সংশোধনীর কড়া প্রতিবাদ করেছেন তিনি।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর এক সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা মোদীকে এই আইনের সংশোধন আনার প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধও জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস না করার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার ভাষায়, কেন্দ্রের এই প্রস্তাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী তাই নয়, এই পদক্ষেপ আইএএস-আইপিএস অফিসার নিযুক্ত করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়কে ব্যাপক ভাবে আঘাত করবে। পর্যাপ্ত আইএএস-আইপিএস অফিসারের অভাবে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ই এখন অসুবিধার সম্মুখীন হয়। তবে কেন্দ্র ১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) আইনে সংশোধন আনলে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে রাজ্যের উন্নয়নের কাজ। নিদারুণভাবে ধাক্কা খাবে সেন্ট্রাল ডেপুটেশন রিজার্ভের অফিসারদের নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তৈরি করা নীতি ও তার রূপায়ণ।
একই সঙ্গে চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন, রীতি অনুযায়ী কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের ভিত্তিতেই আমলাদের ডেপুটেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই আইনের সংশোধন হলে আমলাদের উপর সম্পূর্ণ রাশ থাকবে কেন্দ্রের হাতে, যা কখনওই কাম্য হতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বর্তমান আইন অনুযায়ী রাজ্য ছাড়পত্র না দিলে রাজ্যে নিযুক্ত কোনও আমলাকে টেনে নিতে পারে না কেন্দ্র। যদিও সার্ভিস রুলের ৬(১) ধারা অনুযায়ী কেন্দ্র ডেপুটেশন নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে কিছু করার থাকে না রাজ্যের। প্রসঙ্গত, গতবছর থেকেই একাধিক ক্ষেত্রে আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের রাশ নিজেদের হাতে রাখা নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সংঘাত গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
এর আগে ডায়মন্ডহারবারে এক প্রচার সভায় যেতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়। সেই সময়ও বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিককে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। আর তা নিয়েও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আইএএস (ক্যাডার) আইন, ১৯৫৪ সংশোধন করতে চায় কেন্দ্র। আর এতে আপত্তি রয়েছে মমতার।
Be the first to comment