নারদ মামলায় দলের দুই মন্ত্রী ও এক বিধায়কের গ্রেফতারির খবর শুনে গত ১৭মে সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তিন নেতাকে গ্রেফতারি নিয়ে বলেছিলেন, ‘তাহলে আমাকেও গ্রেফতার করুন। নইলে সিবিআই দফতর ছাড়ব না।’ বুধবার সেই নিজাম প্যালেসে উপস্থিত থাকে নিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সিবিআই দফতরে হাজির হন তিনি ।
হলফনামায় মমতা এও জানিয়েছেন, ধৃতদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে, বিশেষত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে তিনি ছাত্রাবস্থা থেকে পরিচিত, তাঁদের জন্যই সেদিন নিজাম প্যালেসে গিয়েছিলেন। নারদ মামলায় গ্রেফতার হওয়া হেভিওয়েটদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে ছুটে যাওয়ায় মামলা প্রভাবিত হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু এদিন হলফনামায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোনওরকম বল প্রয়োগ করে নয়, তিনি অন্যান্য সবার মতোই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার তিনটি বলয় পেরিয়ে নিজাম প্যালেসের যে বিল্ডিংয়ে সিবিআইয়ের অফিস আছে, তার ১৩ ও ১৫ তলায় গিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, যতক্ষণ সিবিআইয়ের অফিসে সেদিন ছিলেন, ততক্ষণ আধিকারিকদের সমস্ত নিয়ম মেনে চলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা কল্পিত। সেদিন কোনওরকম আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি বলেও হলফনামায় দাবি তাঁর। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে তিনি সিবিআইয়ের অফিসে প্রবেশ করেননি সেদিন।
এমনকি নিজাম প্যালেসের গেটের বাইরে যে জমায়েত হয়েছিল সেখানে তিনি কোনওরকম ভাবেই অংশগ্রহণ করেননি বা জমায়েতকে উদ্দেশ্য করে কোনও কথাও বলেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার এবং তার অধীনে থাকা কলকাতা পুলিশ সমস্ত রকম ভাবে সিবিআইয়ের আধিকারিকদের সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট মামলায়।
পাশাপাশি সিবিআই যেভাবে ই-মেলের মাধ্যমে আদালতের কাছে মামলা দায়ের করেছিল সেটাও আইনবিরুদ্ধ বলে দাবি করেন মমতা। তিনি জানান, তাঁর উপস্থিতিতে সিবিআই অফিস অবরোধ করা এবং গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের সাথে ধর্নায় বসার যে অভিযোগ সিবিআই করছে, তা সত্য নয়। সিবিআই আধিকারিকদের আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হলফনামার শেষাংশে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিবিআইয়ের কার্যকলাপ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছে না। বলা হয়েছে, যে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা অভিযোগ সিবিআই তাদের পিটিশনে করেছে তার পিছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করছে। যার মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। কারণ, দেশে বিজেপি বিরোধী বিশিষ্ট নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনই দাবি এই পিটিশনে। যদিও এখনও এই হলফনামা আদালত গ্রহণ করেনি বলে খবর।
Be the first to comment