আমফানের তাণ্ডব চলার মধ্যেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানালেন, এই ঘূর্ণিঝড় সর্বনাশ করে দিয়েছে।
বুধবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। দুই চব্বিশ পরগনা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে সব নদীবাঁধ। কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আন্দাজ করা যাচ্ছে না।”
ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসেব পেতে তিন-চার দিন সময় লেগে যাবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিকেলে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডেকেছেন মমতা। এদিন রাতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে সঠিক সংখ্যা কত তা পরে জানানো হবে।
এই সময়ে রাজনীতি না করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো পরিস্থিতিকে দেখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে এটাকে রাজনৈতিক ভাবে না দেখে মানবিকতার সঙ্গে দেখতে।” রামকৃষ্ণ মিশন-সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, মানুষের সাহায্যে তারা যেন এগিয়ে আসে।
নবান্নের অর্ধেকটা ভেঙে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, “এত বছর কলকাতায় আছি, এমন দুর্যোগ কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে স্বজন হারিয়েছি।” গত দু’দিন ধরেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিল এনডিআরএফ এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। পশ্চিম মেদিনীপুর এমনকি কলকাতারও কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা এদিন বলেন, “এই কাজটা যদি আমরা গুরুত্ব দিয়ে না করতাম না জানি কত মানুষের মৃত্যু হত!” আশ্রয় শিবিরে যে সমস্ত মানুষ রয়েছেন, আগামী তিন-চারদিন সেখানেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুনর্বাসনের কাজ কী ভাবে করা হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা ঝরে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। এদিন মমতা বলেন, “ভাবতেই পারছি না পুনর্বাসনের কাজটা কী ভাবে করব।” বহু বাড়ি, বিঘের পর বিঘে ধানক্ষেত, অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু পুকুর। পর্যাপ্ত জল নেই।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও উমফানের লেজের ঝাপটা চলছে বাংলায়। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হচ্ছে নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির মুখে দক্ষিণ বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা।
Be the first to comment