মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় কোনও সাধারণ মহিলা নন ৷ তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রার্থী ৷ তাই তাঁর উপর ‘হামলার’ ঘটনা কোনও সাধারণ অপরাধ নয় ৷ নির্বাচন কমিশন কখনই এর দায় এড়াতে পারে না ৷ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনারের মুখোমুখি হয়ে ঠিক এভাবেই নিজেদের পক্ষ পেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ৷ তাঁদের যুক্তি মেনে নেয় কমিশনও ৷
এরপরই নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আহত হওয়ার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা ৷ যা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায় ৷
গত বুধবার মনোনয়ন পেশ করেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ তারপর প্রচার কর্মসূচি চালানোর সময়েই গুরুতর জখম তিনি ৷ চোট লাগে পা, কোমর, কাঁধ, মাথায় ৷ তৃণমূলের দাবি, ষড়যন্ত্র করে হামলা চালানো হয়েছে মমতার উপর ৷ এর জন্য গেরুয়া শিবিরকেই কাঠগড়ায় তুলেছে তারা ৷
ষড়যন্ত্রের তত্ত্বের স্বপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি খাড়া করেছে রাজ্য়ের শাসকদল ৷ তাদের সাফ কথা, মমতার উপর যে এমন হামলা হতে পারে গত ৭ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ৷ হামলার ইঙ্গিত ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য় সভাপতি সৌমিত্র খাঁর গলাতেও ৷
নন্দীগ্রামের ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনকেও কাঠগড়ায় তুলেছিল তৃণমূল ৷ তাদের প্রশ্ন ছিল, কমিশন রাজ্য়ের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়ার পরই কেন ‘হামলা’ হল মমতার উপর ? যদিও তৃণমূলের প্রশ্নমালার জবাবে কড়া চিঠি দিয়েছে কমিশনও ৷ তাদের পাল্টা যুক্তি, ভোটমুখী রাজ্য়ে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তাদের এক্তিয়ারভুক্ত হলেও সাধারণ কোনও অপরাধের ঘটনার দায়ভার আদতে রাজ্যেরই ৷
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে যান তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধিরা ৷ সেখানেও ‘সাধারণ অপরাধের’ যুক্তি পেশ করেন কমিশনের কর্তারা ৷ পাল্টা তৃণমূল প্রশ্ন তোলে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় কি কোনও সাধারণ মহিলা ? তিনি তো রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী ৷ তার উপর আসন্ন নির্বাচনের একজন প্রার্থী ৷ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তাঁর উপর যদি কোনও হামলা হয়, তাহলে সেটা কি নির্বাচন সংক্রান্ত নয় ? সেই ঘটনায় কি নির্বাচন কমিশনের কোনও দায় নেই ?
প্রতিনিধিদলের অন্য়তম সদস্য তথা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, তাঁদের এইসব যুক্তি উড়িয়ে দিতে পারেনি কমিশন ৷ তারা জানিয়েছে, ঘটনার দিনই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে ৷ লিখিতভাবে পূর্ণাঙ্গ ঘটনা জানতে চাওয়া হয়েছে ৷ এরই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের দাবি, নন্দীগ্রামের ওই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করাতে হবে ৷ কমিশন তাঁদের এই দাবি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্য়বস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌগত ৷
প্রসঙ্গত, এদিন তৃণমূলের প্রতিনিধিদলে সৌগত রায় ছাড়াও ছিলেন শতাব্দী রায়, কাকলী ঘোষ দস্তিদার, ডেরেক ও’ব্রায়েন, প্রতিমা মণ্ডল ও শান্তনু সেন ৷ অন্য়দিকে, নির্বাচন কমিশনের তরফে দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল অরোরা-সহ উপস্থিত ছিলেন শীর্ষস্তরের সব আধিকারিকরাই ৷
Be the first to comment