ম্যাথু স্যামুয়েলের ভূমিকা ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়লো

Spread the love
বিহারের প্রাক্তন বিধায়ক দেবেন্দ্র প্রসাদ যাদবকে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে এর আগে ম্যাথু স্যামুয়েলের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও কৈলাস বিজয়বর্গীর টেলিফোনে কথোপকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ম্যাথু স্যামুয়েলের ভূমিকা ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ল।
কে এই ম্যাথু? ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে নারদ নিউজের এই সাংবাদিক তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন চালিয়েছিলেন। পরে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সেই স্টিংয়ের ফুটেজ প্রকাশ করে দেন ম্যাথু। ওই স্টিং ফুটেজকে সামনে রেখেই পরবর্তী কালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে নারদ কাণ্ডে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর তদন্ত শুরু করে। এবং যা এখনও চলছে শুধু নয়, উনিশের ভোটের আগে ফের তা নিয়ে নাড়াচাড়াও শুরু হয়েছে।
কিন্তু এরই মাঝে রবিবাসরীয় দুপুরে একটি অডিও টেপ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরতে শুরু করে। যাতে শোনা যাচ্ছে, মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয় টেলিফোনে কথা বলছেন। এবং মুকুলবাবু কৈলাসকে বলছেন যে, ম্যাথু তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এবং তিনি মুকুলবাবুকে প্রস্তাব দিয়েছেন, ২ কোটি টাকার বিনিময়ে একটি ২৪ ঘন্টার এমন বিস্ফোরক ভিডিও ফুটেজ তিনি দিতে পারেন, যা ফাঁস হলে তৃণমূল খতম হয়ে যাবে! মুকুলবাবু কৈলাসকে এও জানান, ওই ভিডিও ফুটেজ হংকংয়ে রাখা রয়েছে বলে ম্যাথু তাঁকে জানিয়েছেন। অগ্রিম পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে ওই ফুটেজ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
মুকুল-কৈলাসের কথোপকথনের এই অডিও টেপে সত্যতা যাচাই করাও দ্য ওয়ালের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে মুকুলবাবু নিজেই জানিয়েছেন, অডিও টেপে তাঁর গলাই শোনা যাচ্ছে এবং তিনি তাঁর দলের নেতার সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করছিলেন মাত্র। এতে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন উঠেছে ম্যাথু স্যামুয়েলের ভূমিকা নিয়ে। রাজনৈতিক স্তরে অনেকেরই প্রশ্ন, ম্যাথু স্যামুয়েলের সঙ্গে কথা না হলে মুকুলবাবু বিজেপি-র পর্যবেক্ষককে নিশ্চয়ই সে কথা বলবেন না। কারণ, তিনি পোড় খাওয়া নেতা। তা হলে কি রাজনৈতিক নেতাদের ব্ল্যাকমেল করার জন্যই ম্যাথু স্টিং অপারেশন চালিয়েছিলেন? সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গণতন্ত্রের সেবা করার যে ঢক্কা নিনাদ তিনি করেছেন তা তা হলে ঝুটো!
ম্যাথু স্যামুয়েল বলেন, “আমি এ ব্যাপারে পরে বলব। দুর্গাপুজো দেখতে একবেলার জন্য কলকাতায় আসতে পারি, তখনই বলব।” কিন্তু একথা অবশ্যই প্রশ্নের জবাব নয়। তাই তাঁর কাছে ফের স্পষ্ট জবাব জানতে চাওয়া হয়। তখন ম্যাথু বলেন, “মুকুলবাবুর সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথা তাঁর হয়নি।” কিন্তু পরক্ষণেই ম্যাথু বলেন, কলকাতা পুলিশ তাঁকে যখন হেনস্তা করছিল, তখন তিনি সিপিএম, কংগ্রেসের অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এমনকি সে সময় তিনি কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে দেখা করেন। দিল্লিতে সাংবাদিকতা করার সুবাদে কৈলাসের সঙ্গে তাঁর নাকি ১৫ বছরের পরিচয়। ম্যাথু এও জানান, কৈলাসের বাড়িতেই তাঁর সঙ্গে একবার মুকুল রায়ের দেখা হয়েছিল।
অথচ মুকুল রায়ের কথা মতো অডিও টেপটি যদি সত্যিই হয়, তা হলে তা শুনে বোঝার উপায় নেই যে কৈলাস আগে থেকেই ম্যাথুকে চিনতেন। বরং মুকুল রায়কে ওই টেপে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি যেন একবার ম্যাথু-র সঙ্গে দেখা করেন। ফলে অডিও টেপের কথোপকথন ও ম্যাথুর বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে বইকি।
প্রসঙ্গত, নারদ স্টিং ফুটেজ প্রকাশের পর ম্যাথু দাবি করেছিলেন, গোটা অপারেশনের জন্য তাঁর অনাবাসী ভারতীয় কিছু বন্ধু তহবিলের ব্যবস্থা করেছিলেন। এক বছর পরে তিনি একেবারেই অন্য কথা বলেন। তিনি জানান, নারদ নিউজের আগে যে সংস্থায় তিনি কাজ করতেন তারাই তহবিলের টাকা জুগিয়েছিল।
স্বাভাবিক ভাবে রবিবারের টেপ প্রকাশ হওয়ার পর ম্যাথুর ভূমিকা নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতিতে সন্দেহের পরত তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে তৃণমূলের এক মুখপাত্র বলেন, নারদ কাণ্ড বিচারাধীন তাই কোনও মন্তব্য করব না। কিন্তু ম্যাথু কী উদ্দেশ্যে স্টিং অপারেশন করেছিলেন তা এখন পরিষ্কার। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের অনেকের বক্তব্য, ম্যাথুর উদ্দেশ্য যা থাক, নারদ কাণ্ডে তৃণমূলের কিছু নেতাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। সেটা ঘোর বাস্তব। এ ব্যাপারে মামলা ও তদন্ত শেষমেশ কোন পথে এগোয় এখন সেটাই দেখার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*