মৌসম বেনজির নূর। কংগ্রেসের এই সাংসদ যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। চিরকালই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত স্নেহের। কিছুটা তাঁর মামা গণিখান চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধায়, কিছুটা মৌসমের শান্ত শিষ্ট স্বভাব,ভদ্র ব্যবহারের জন্য তাঁকে পছন্দ করেন মমতা।
২০০৯ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক মৌসম। লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস এর ছাত্রী মৌসম পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে প্রাকটিস ও করতেন। কিন্তু রক্তে যে আছে রাজনীতি।
ছোটবেলা থেকে দেখেছেন মামা বরকত গণিখানের কাছে অগুনতি মানুষ আসছেন নানা অনুরোধ উপরোধ নিয়ে। মামাও যেন কল্পতরু। যতদূর সম্ভব মানুষের উপকার করে চলেছেন। রেলমন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি বাংলার বেকার সমস্যা সমাধানে তাঁর ভূমিকা ভোলার নয়। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মামা গণিখান এর মিল খুঁজে পান মৌসম। দুজনেরই একটি বিষয়ে মিল তা হল বাংলার উন্নয়ন। একজন অতীত। ২০০৬ সালে মারা গিয়েছেন বরকত। আজও শুধু মালদহ নয়, সারা বাংলা তাঁর অবদান মনে রেখেছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও একসময় ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। উন্নয়নের জোয়ার এনেছিলেন।বহু রেলপ্রকল্প চালু করে দেখিয়েছিলেন কাজ করা কাকে বলে।২০১১ সালে বাংলায় ‘ পরিবর্তন ‘ আনলেন মমতা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উন্নয়নের। বামফ্রন্ট সরকারের করা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিয়েছেন। তাইতো ২০১৬ সালে তাঁকে আবার ফিরিয়ে এনেছে বাংলার মানুষ।
মা রুবি নূরের মৃত্যুর পর তাঁর ই বিধানসভা আসন সুজাপুরে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জেতেন মৌসম। সেই বছরই লোকসভা ভোটে তাঁকে উত্তর মালদা থেকে প্রার্থী করে কংগ্রেস। ২০০৯ এবং২০১৪ পরপর কংগ্রেসের টিকিটে জেতেন তিনি।
সামনে লোকসভা ভোট। অনেকের মতে এবারে তাঁর কেন্দ্র মালদা উত্তর থেকে জিততে পারবেন না বলে মমতার শরণাপন্ন হলেন তিনি।
কংগ্রেসের অনেক নেতা তাঁর তৃণমূলে যোগদান কে বিশ্বাসভঙ্গ করা বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় তা নয়। এটা ঠিক বরকত সাহেবের মালদা গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ব্রাত্য করেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। মমতার নির্দেশে তরুণ তুর্কী নেতা শুভেন্দু অধিকারী মালদায় ঘাসফুল ফোটাতে আদাজল খেয়ে লেগেছেন। মালদায় হাত এখন ব্যস্ত জোড়াফুল ফোটাতে। তাতেই কি ভয় পেয়ে তৃণমূলে যোগদান মৌসমের।ভোট কাটাকাটি তে মালদা উত্তরে বিজেপির জয়লাভের সম্ভাবনা বলে অনেকের মত।
কিন্তু শুধুই ভোটে জেতার জন্য মা রুবি নূর, তিন মামা বলা যায় পুরো পরিবার যে দলের প্রতি দীর্ঘকাল আনুগত্য দেখিয়েছে তাকে ছেড়ে আসা যায় না। আসলে রাজ্য কংগ্রেস এর সংগঠনের দৈন্যদশা সত্বেও তারা একলা চলতে চায়। সোমেন মিত্র, গৌরব গগৈরা কোনমতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে চাননা। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসে থেকে মৌসম ছিলেন জোটপন্থী। তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য কংগ্রেস। হাইকম্যান্ডও রাজ্য নেতৃত্বের কথায় সুর মেলাবে এই ইঙ্গিত পেয়েই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
মৌসম পদলোভী নন, এ কথা আগেই প্রমাণিত। ইউপিএ সরকার তাঁকে মন্ত্রী হওয়ার অফার দেয়। কিন্তু তিনি মাতৃত্বকে প্রাধান্য দেন। তাঁর দুই শিশু পুত্র কন্যা লা মার্টিনিয়ার এ পড়ে। মা হিসেবে দায়িত্বে ফাঁকি দেন না তিনি। মা রুবি নূর এর মৃত্যু দিবসে মুক্তহাতে দান করেন।দিল্লি, কলকাতা যেখানেই থাকুন না কেন মন পড়ে থাকে মালদায়। বারবার শিকড়ের টানে ছুটে যান সেখানে। মৌসম আজ মুক্তকণ্ঠে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে চান। বিজেপি বিরোধী মহাজোটের মুখ মমতা,বলেন মমতাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই। মৌসম কে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে। মালদা উত্তর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হবেন তিনি।
Be the first to comment