তপন মল্লিক চৌধুরী,
১৯ মে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ে হবে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। এটি সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে ২০ মাইল দূরে সবচেয়ে পুরোনো ও বড় দুর্গ। প্রাচীনতম এই দুর্গেই খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে হবে মেগান ও হ্যারির। উইন্ডসর হ্যারির দাদি ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাসস্থান। সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় তিনি এখানেই থাকেন। এদিকে বিয়ের আগের রাতে একসঙ্গে থাকছেন না তাঁরা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, উইন্ডসর ক্যাসেলের কাছাকাছি বিলাসবহুল কোওয়ার্থ পার্ক হোটেলে থাকবেন প্রিন্স হ্যারি। জীবনের শেষ ব্যাচেলর নাইটটি তিনি ভাই প্রিন্স উইলিয়াম আর কাছের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন।
শোনা যাচ্ছে, মেগান মার্কেলের বাবা টমাস মার্কেল মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। মেক্সিকোয় নিজের বাসভবনে টমাস শোবিজ-বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট টিএমজেডকে বলেন, তিনি প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাঁর মেয়ে মেগান মার্কেলের বিয়েতে উপস্থিত থাকবেন না। আর কেনসিংটন প্যালেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিয়ের ঠিক আগে মেগান মার্কেলের জন্য এটি একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
মেয়ের বিয়েতে কেন আসবেন না টমাস মার্কেল? জানা গেছে, মেয়ের বিয়ের জন্য টমাস মার্কেল কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এসব ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবিতে মনে হচ্ছে, মেগানের বাবা যেন জানতেন না যে তাঁর ছবি তোলা হচ্ছে। কিন্তু ডেইলি মেইলের এক খবরে জানা যায়, ছবিগুলো ছিল সাজানো। অর্থের বিনিময়ে মেগানের বাবা এসব ছবির জন্য পোজ দেন। এই ছবি কেলেঙ্কারির পর মেগানের বাবা বিয়েতে না আসার ঘোষণা দিয়েছেন। টমাস জানান, বিয়েতে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর মেয়েকে বিব্রত করতে চান না।
কোওয়ার্থ পার্ক হোটেল থেকে উইন্ডসর যেতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। পার্কল্যান্ডের এক একর জায়গার ওপর এই হোটেল। এই হোটেলের যে রুমে প্রিন্স হ্যারির থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার জন্য প্রতি ২৪ ঘণ্টার ভাড়া ১ হাজার ২৭০ পাউন্ড।
বিয়ের প্রস্তুতি এখন একেবারই চূড়ান্ত। গত শনিবার রাজপরিবার থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের ব্যাপারে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্মতির কথা জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১৪ মার্চ প্রিভি কাউন্সিলের সভায় রানি আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিয়ের অনুমতি দেন।
হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়ের ভেন্যু ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছেন লন্ডনের ফুল ব্যবসায়ী ফিলিপ্পা ক্র্যাডোক। থাকছে সাদা গোলাপ, পিওনি ও ফক্সগ্লোভস। ফুলের পাশাপাশি ভেন্যু সাজাতে কয়েক ধরনের সুন্দর পাতাও ব্যবহার করা হবে। আর বিয়ের পর সেই ফুলগুলো সব দান করে দেওয়া হবে স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। বিয়েতে ব্যবহৃত অনেক ফুল আর পাতা সংগ্রহ করা হবে রাজপরিবারের নিজস্ব ক্রাউন এস্টেট আর উইন্ডসর গ্রেট পার্কের বাগান থেকে।প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেল দুপুরে বিয়ের শপথ নেবেন। এক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা। উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠ থেকে ১ হাজার ২০০ জন সাধারণ মানুষ এই রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী হতে পারবেন। আর লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টার মধ্যে তাঁদের উপস্থিত হতে হবে।
বিয়ের মূল অতিথিরা সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আসতে শুরু করবেন। বেলা ১১টার মধ্যেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিত হতে হবে। সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন তাঁরা। রাজপরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠান স্থলে সবশেষে হাজির হবেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু আগে থেকে তাঁরা আসতে শুরু করবেন। তাঁদের মধ্যে কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ আবার হেঁটেই সেখানে উপস্থিত হবেন।মেগানের মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড বিয়েতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে। বিয়ের ভেন্যুতে মেগানকে নিয়ে আসবেন তাঁর মা। ভেন্যুতে আসার পর কয়েকজন ‘ব্রাইডস মেড’ মেগান মার্কেলের সঙ্গে হেঁটে চ্যাপেলে আসবেন। কিন্তু হবু রাজবধূ কাউকেই ‘মেড অব অনার’ হিসেবে নেবেন না বলে জানিয়েছেন। কারণ, তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সংখ্যা খুব কম। ‘ব্রাইড অব অনার’ হিসেবে একজনকে বাছাই করে অন্যদের মনে কষ্ট দিতে চান না তিনি।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নবদম্পতি গির্জার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যারির নিজস্ব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ২০০ প্রতিনিধির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এরপর ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে উইন্ডসর ক্যাসেল ত্যাগ করবেন হ্যারি ও মেগান। ২৫ মিনিটে ক্যাসেলের চারদিক ঘুরে তাঁরা আবার আগের জায়গায় ফেরত আসবেন। সেখানে রানির সৌজন্যে আমন্ত্রিত অতিথিদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। একই দিন সন্ধ্যায় উইন্ডসর ক্যাসেলের দক্ষিণে অবস্থিত ফ্রোগমোর হাউসে নবদম্পতির জন্য নৈশভোজের আয়োজন করবেন হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লস। এই ভোজে রাজপরিবারের সদস্য আর খুব কাছের বন্ধুরা মিলে মাত্র ২০০ জন থাকতে পারবেন।
রাজপরিবারের সদস্য বলে প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কেলের বিয়ের অনুষ্ঠান বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই সরাসরি দেখা যাবে। বিয়ের অনুষ্ঠান পাবলিক হয়ে গেলেও মধুচন্দ্রিমা যথাসম্ভব গোপনেই সারবেন মেগান-হ্যারি। তবে রাজপ্রাসাদের তথ্য অনুযায়ী, বিয়ের পর শিগগিরই হানিমুনে যাচ্ছেন না এই হবু দম্পতি। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা যাপনে বটসওয়ানা যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বাগদানের আগেও একবার সেখানে গিয়ে ছুটি কাটিয়ে এসেছেন দুজন।
Be the first to comment