ব্রততী ঘোষ
কারও সঙ্গে কথা শেষ করে সেলফোন ঘাঁটছিলেন, কল হিস্টোরিতে দেখলেন একটি নম্বর, রিসিভড কল, দু’চার মিনিট কথাও বলা হয়েছে। হ্যান্ডসেটে নম্বরটি সেভ নেই বলে মনে করতে পারছিলেন না ঠিক কার সঙ্গে কথা বলেছেন!
অফিসে আছেন। কারও ডেস্কে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করে উঠে দাঁড়ালেন। পাশ থেকে অন্য কেউ একজন ডেকে কথা বলতেই ভুলে গেলেন আসলে কী জন্য চেয়ার থেকে উঠলেন!
নড়েচড়ে বসুন, আপনার স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। মস্তিষ্কের কোষে চাপ পড়েছে বলে এই জটিলতা। তাহলে কী করে চাঙ্গা রাখবেন মস্তিষ্কের কোষকে? জেনে নিন পাঁচটি টিপস-
ব্যায়াম করুন, অল্প সময়ের জন্য হলেও ব্যায়াম করুন। শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম অথবা দৌড়াদৌড়ি করুন নিয়মিত। অল্প সময়ের জন্য হলেও ব্যায়াম করলে কেবল শরীর চাঙ্গা থাকে না, মস্তিষ্কও হয়ে ওঠে চনমনে। ব্যায়ামটা সকাল সকাল করা গেলে খুব ভালো, সারাদিন ফুরফুরে মেজাজে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া, দেওয়ালে বল ছুঁড়ে ক্যাচ ধরার প্র্যাকটিস করুন মনোযোগ বাড়াতে। ঘুমান প্রয়োজনমতো। ঘুমে খানিক ব্যাঘাত হলে তার ছাপ সারাদিন থাকে। এভাবে নিয়মিত ঘুমে ব্যাঘাত হলে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ে, যা আপনাকে ঠেলে দেবে স্মৃতিভ্রমে। সুতরাং রোজ ভালো ঘুমের ওপর জোর দিন। একজন সুস্থ মানুষের জন্য দিনে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন, কারও কারও ক্ষেত্রে এর বেশিও লাগতে পারে, সেটা ব্যক্তিই অনুভব করবেন। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি দেখা, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বন্ধ করুন। এসব ডিভাইস চোখের আরাম কেড়ে নেয়।মগজ শাণিত করতে খেলুন শব্দছক। কোনো কিছু ঘষতে ঘষতেই ধার হয়, মস্তিষ্ক ধার দিতে বা শাণিত করতেও দরকার ধার দেওয়া। পত্রিকা বা অনলাইনে নিয়মিত শব্দছক খেলে ধার দেওয়া যেতে পারে মগজে। এছাড়া নিয়মিত সৃজনশীল খেলা খেলতে হবে। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা-আড্ডা দিতে হবে।
সারাদিন কাজে ডুবে থাকেন। দিনশেষে ঘরে ফেরার সময়ও সঙ্গে নিয়ে আসেন কাজ। এই ধকলটা আপনার মস্তিষ্ক এখন নিতে পারছে না। দিনের কাজ দিনে শেষ করে আসা দক্ষ ব্যক্তির পরিচয়- মনিষী এপিজে আবদুল কালামের এই বাণী মাথায় রেখে আপনিও দিনের কাজ দিনে শেষ করুন, রাতে ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্য বা রুমমেটদের আড্ডাবাজি করুন, মস্তিষ্ককে একটু ‘বিশ্রাম’ দিন। আর কোনোভাবেই মানসিকভাবে হতাশায় তলিয়ে যাবেন না, লড়াইয়ের মানসিকতায় এগিয়ে যান।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান নিয়মিত। প্রথমেই খাবার তালিকা থেকে বাদ দিন চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার। খাবার তালিকায় যোগ করুন শাক-সবজি, ফলমূল। এর পাশাপাশি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ( আখরোট, সয়াবিন ও পালং শাক পাংগাস, পাবদা, রুই, ইলিশ) খাবারেও নজর দিন। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট (দুধ, দই, ছানা, পাকা কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আম) খাবারও খেতে হবে ভরপুর। গ্রিন-টিও দারুণ উপকারী। খাবারে তেল-মশলা কমিয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার বাড়ান। আর অবশ্যই সকাল-দুপুর-রাতের খাবারটা নিয়মের মধ্যে আনুন। বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সকাল-দুপুর একসঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া চলবে না। চলবে না রাতে ঘরে ফিরে রাত ১-২টায় খাবার খাওয়াও।
সর্বোপরি যতটা সম্ভব হাসিখুশির মধ্যে থাকুন, নির্ভার রাখুন মস্তিষ্ককে। সুন্দর জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠুক।
Be the first to comment