সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আগেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন । এবার চা খেতে গিয়ে সোশাল মিডিয়ায় “ভাইরাল” হওয়া মৃদুল দেবের পাশে দাঁড়ালেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। বাড়িতে লোক পাঠিয়ে মৃদুলবাবু সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বললেন। দেওয়া হল কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। কথা দিলেন, লকডাউন উঠে গেলে মৃদুলবাবুর ছেলের পড়াশুনার যাবতীয় দায়িত্ব নেবেন তিনি।
“আমরা চা খাব না!” বাক্যটাকে নিয়ে কত ঠাট্টা, কত মশকরা, কত মিম। জনতা কারফিউয়ের দিন এক ব্যক্তির “চা প্রেম” নিয়ে কতই বিদ্রুপ করেছিলেন নেটিজেনরা। তারপরই সোশাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক হয়ে ওঠা মানুষটার জীবনে নেমে আসে এক অদ্ভুত আঁধার। সঙ্গে কটূক্তি। আবার বাড়ি এসে হুমকিও নাকি দিয়েছিলেন কেউ কেউ। অথচ রাজমিস্ত্রি সেই “চা কাকু”-র লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ। যাদবপুরের বিজয়গরের শ্রী কলোনির বাসিন্দা তিনি। সেখানেই ছ’ফুট বাই চার ফুটের দু’টো ঘর। পেশায় রাজমিস্ত্রি মৃদুল দেবের সেটাই শান্তির নীড় ছিল এতদিন।
স্ত্রী, পুত্র, বৃদ্ধা মা, আর মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি । এই নিয়েই মৃদুলবাবুর পৃথিবী । পুরোপুরি মিস্ত্রি নন মৃদুল । ৬৫ বছরের মানুষটা আসলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে । রোজ কাজে গেলে ৩০০ টাকা পান । জনতা কারফিউ কী, তা জানা ছিল না তাঁর । তবে সেদিনও কাজ বন্ধ করেননি । হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরে ছিলেন তিনি ৷ বিকেলে পাড়ার চায়ের দোকান খোলা পেয়ে রোজকার অভ্যেসে গিয়েছিলেন চা খেতে । তখন এক যুবতি তাঁর ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেন । তারপর থেকেই মৃদুল হয়ে ওঠেন সোশাল মিডিয়ায় “চা কাকু ।” ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর মিমও শুরু হয় ।
কেউ একবার খোঁজ নিয়েও জানতে চাননি, কী তাঁর পরিচয় । তিনি কি আড্ডা মারতে বেরিয়েছিলেন রাস্তায়? নাকি না বুঝে সরল মনে করেছিলেন কাজটা । মৃদুলবাবুর বিষয়ে খবর পাওয়ার পর পাশে দাঁড়িয়েছেন BCCI প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । করেছেন সাহায্য । আপাতত তাতেই দিনগুজরান হচ্ছে । তিনি বলছিলেন, “পেটে ভাত নেই ৷ লোকে হাসি মশকরা করছে, হুমকি দিচ্ছে, কখনও কখনও মারধর করার কথা বলছে । আমার পেটের ভাতের ব্যবস্থা করে দিন । বৃদ্ধা মা, মানসিক ভারসাম্যহীন দিদি আর সংসার নিয়ে আমি শুধু বাঁচতে চাই ।”
মিমি চক্রবর্তী মৃদুলবাবুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন যোগাযোগের ফোন নম্বর । যে কোনও প্রয়োজনে সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন এলাকার সাংসদ । মিমির এই উদ্যোগে খুশি মৃদুলের পরিবার ।
Be the first to comment