বর্ষীয়াণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের মন্তব্য নিয়ে দেশজোড়া অসন্তোষের আবহে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। প্রতিদ্বন্দ্বীর উদ্দেশে কড়া বাউন্সার দিয়ে ইমরানের দাবি, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী ভাবে আচরণ করতে হয়, তাঁদের কী ভাবে দেখভাল করতে হয়, সেটা তিনি মোদী সরকারকে বিলক্ষণ শিখিয়ে দেবেন।
বুলন্দশহরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন, এ দেশে এখন তাঁর নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হয়! সেই কথার রেশ টেনে ইমরান বলেছেন, “ভারতের সংখ্যালঘুদের দাবি তাঁরা উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা পান না। আমি মোদী সরকারকে দেখাতে চাই কী ভাবে একটি দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উপযুক্ত নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া যায়।”
লাহোরে পঞ্জাব সরকারের কাজের সাফল্যের সূত্র ধরে পাক প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার দেশের সংখ্যালঘুদের উপযুক্ত মর্যাদা দিয়েছে। মহম্মদ আলি জিন্না যেমন চেয়েছিলেন তেমনটাই হয়েছে। ‘নতুন পাকিস্তান’-এ সব ধর্মের নাগরিককে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
একটি ওয়েবসাইটে অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভিডিও বার্তা প্রকাশ্যে আসার পরই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সেখানে তিনি বলেন, বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে গেছে গোটা দেশে। এখানে একজন নিহত পুলিশ অফিসারের চেয়ে গরুর গুরুত্ব বেশি। সেই প্রসঙ্গেই নিজের সন্তানদের কথা তুলে প্রবীণ অভিনেতা বলেন, ‘‘আমার রীতিমতো দুশ্চিন্তা হয় যে আমার সন্তানদের ঘিরে ধরে উন্মত্ত জনতা যদি প্রশ্ন করে, তোমরা হিন্দু না মুসলিম, ওরা কোনও উত্তরই দিতে পারবে না। কারণ আমরা (নাসির ও তাঁর স্ত্রী রত্না পাঠক) সচেতন ভাবেই ওদের কোনও ধর্মীয় শিক্ষা দিইনি।’’
এই মন্তব্যের পর জল গড়ায় বহুদূর। নাসিরকে নিয়ে শুরু হয় ট্রোল। কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে আক্রমণ করতে শুরু করেন। ‘দেশদ্রোহী’, ‘দেশবিরোধী’ বলেও দেগে দেওয়া হয় তাঁকে। সেই প্রসঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু একজন অভিনেতা নন, দেশের আইন যদি যদি দুর্বলদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে এই ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
চার মাস হতে চলল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান খান। ক্ষমতায় আসার পরই চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইমরান। কিন্তু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে সেই প্রস্তাব বাতিল করে দেন মোদী। এর পরেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বিজেপিকে ‘মুসলিম বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। এ বার বুলন্দশহরের ঘটনা ও নাসিরের মন্তব্যের পর ফের একবার সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে টেনে মোদীকে একহাত নিলেন বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
Be the first to comment