তাঁরা দু’জনেই রাষ্ট্রের মুখপাত্র। দু’জনেই খ্রিস্টমাস বার্তা টুইট করলেন। কিন্তু সেই বার্তাই বুঝিয়ে দিল তাঁদের পার্থক্য তথা দু’দেশের পার্থক্য। বোঝা গেল, দু’দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবে কত তফাত।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত কাল টুইট করেন, তাঁর দেশের সমস্ত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদের খ্রিস্টমাস উৎসব শুভ হোক। আর এই নিয়ে কোনও আপত্তিও ওঠেনি পাকিস্তানে। কেবলমাত্র খ্রিস্টানদেরই কেন শুভেচ্ছা জানানো হল, একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে কেন আনন্দের আগে ধর্ম এল, এই প্রশ্ন কেউ তোলেননি সেখানে। দেশের সকল মানুষকে শুভেচ্ছা জানানোই যেখানে শোভনীয়, সেখানে কেন আলাদা করে খ্রিস্টানদের কথা উল্লেখ করা হল, সে কথা কেউ জানতে চাননি।
অন্য দিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা বার্তায় কিন্তু ধর্মের উল্লেখ নেই কোনও। এমনকী উল্লেখ নেই দেশেরও। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি প্রভু যিশুর সাম্য ও করুণার কথা মনে করতে বলেছেন। যদিও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরে মোদী সরকারকে খুব সহিষ্ণু এবং সাম্যে বিশ্বাসী বলে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই, তবু খ্রিস্টমাসের বার্তায় অন্তত খোলা মনের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
অনেকেই মনে করছেন, ইমরান খানের টুইট দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁর দেশের সকল মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার সকলের জন্য সমান নয় মোটেই। তাই সে দেশের খ্রিস্টমাস উইশ আবদ্ধ থাকে খ্রিস্টানদের জন্যই। যদিও ১৯৪৭ সালে মহম্মদ আলি জিন্নার তৈরি করা পাকিস্তানে এমনটা না হওয়ারই কথা ছিল। জিন্না বলেছিলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রতিটি মানুষ এই দেশে সমান অধিকারে বাঁচতে পারবেন। তাঁর উত্তরসূরিরা কথা রাখছেন না বলেই অভিযোগ উঠেছে বারবার।
সে দেশের মানুষই বলছেন, হিন্দুদের মন্দিরে যেতে এবং শিখদের গুরুদ্বারে যেতে যত দিন নিরাপত্তারক্ষীদের উপর ভরসা করতে হবে, তত দিন সংখ্যালঘুরা সমান অধিকারে বাঁচছেন, এ কথা বলা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তাও মনে করিয়ে দেয় সেই কথাই। জানিয়ে দেন, যে তিনি মনে করেন, একটি মুসলিম প্রধান দেশে খ্রিস্টমাস পালন করার কথা কেবল খ্রিস্টানদেরই।
আর এইখানেই তফাত বোঝা যায় দু’দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের।
Be the first to comment