দেশজুড়ে করোনা ঝড়। তবে আর যে লকডাউনের পথে হাঁটতে চায় না মোদী সরকার, সে ব্যাপারে কার্যত স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদী বললেন, ‘আপনারা সচেতন হলে, লকডাউনের কোনও প্রশ্নই নেই। দেশকে লকডাউনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।’ একইসঙ্গে রাজ্যগুলোর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বার্তা, ‘লকডাউন সর্বশেষ অস্ত্র। রাজ্যগুলোকে অনুরোধ করব, লকডাউনকে শেষ বিকল্প হিসেবে ভাবতে।’
উল্লেখ্যে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আবারও লকডাউন জারি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আবহে এদিন লকডাউন নিয়ে যেভাবে আশ্বস্ত করলেন মোদী, তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, করোনা মোকাবিলায় দেশের একাধিক রাজ্যে লকডাউন জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ। জল্পনা চলছে, আগামীকাল থেকে মহারাষ্ট্রেও লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে। এই আবহে রাজ্যগুলির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিঃসন্দেহে বিশেষ তাৎপর্যবাহী।
গত বছর করোনার সংক্রমণ রুখতে চার দফায় মোট ৬৮ দিনের লকডাউন জারি করেছিল কেন্দ্র। তার জেরে দেশের অর্থনীতির কোমর কার্যত ভেঙে যায়। কর্মহীন হয়ে পড়েন সংগঠিত ও অসংগঠিত দুই ক্ষেত্রের বহু মানুষ। স্টেশনে স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঢল নামে। পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে হাজার হাজার কিমি পথ অতিক্রম করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ছবি মোদী সরকারের কাছে বড়সড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একাধিক আর্থিক প্যাকেজ ও অন্যান্য নানা পদক্ষেপের জেরে সবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল দেশের অর্থনীতি। তার মধ্যেই আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সংক্রমণের হার গতবাড়ের তুলনায় আরও বেশি হওয়ায় চিন্তায় কেন্দ্র। সেই সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বিঁধছে রাজ্যে রাজ্যে অক্সিজেনের অভাব।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সহ কার্যত গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বাংলার বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে মেতে থাকায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ভাষণ দেশবাসীকে অনেকটাই আশ্বস্ত করবে বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।
এদিনের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সুর ছিল লকডাউনের তীব্র বিরোধিতা। কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে নরেন্দ্র মোদীর দাওয়াই, ‘সকলে করোনা বিধি মেনে চলুন। অকারণে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।’ অন্যদিকে, গত বছর লকডাউনের ধাক্কায় চরম দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। সেই স্মৃতি যাতে না ফেরে তার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাজ্যগুলির কাছে অনুরোধ, আপনারা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকুন। তাঁরা যেখানে রয়েছেন সেখানেই থাকতে পরামর্শ দিন। সেখানেই তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’
এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে মোদী আরও বলেন, ‘গতবার করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল ছিল। মনে করে দেখুন, গতবছর কী অবস্থা ছিল। এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। অনেক কম সময়ে আমরা এর মোকাবিলা করতে পেরেছি। অক্সিজেন সংকট মেটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে, হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’ মোদীর দাবি, ‘বিশ্বের মধ্যে ভারতেই করোনা টিকা মেলে সবথেকে কম দামে।’
Be the first to comment