দীর্ঘদিন ধরে ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বারবার টাকা ফেরানোর দাবি জানানো হলেও কেন্দ্রের তরফে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়িতে জনসভায় এই ইস্যু তুলে ধরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া সুরে তিনি জানিয়ে দিলেন, “১০০ দিনের টাকা দিন, না হলে গদি ছাড়ুন।”
বিরসা মুন্ডার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার বেলপাহাড়ি জনসভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। তারা টাকা কেটে নিচ্ছে। আগে রাজ্য ট্যাক্স সংগ্রহ করত। এখন কেন্দ্র সরকার সব ট্যাক্স সংগ্রহ করে। রাজ্যগুলোকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। যাই কিনতে যাচ্ছেন জিএসটি দিতে হচ্ছে। আর সেই টাকা দিল্লি চলে যাচ্ছে। উল্টে প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। ১০০ দিনের কাজের টাকা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১০০ দিনের টাকার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। এবার কি পায়ে ধরতে হবে? যদি টাকা না দাও গদি ছাড়তে হবে। আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ সড়ক তৈরির টাকাও দিচ্ছে না। বীরসা বলতেন, দেশ রানি চালাবে না। আমরা চালাব। বীরসার দেখানো পথে আদিবাসী মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সারা বাংলাকে বলব নিজেদের অধিকার কেড়ে নিতে হবে।”
এছাড়াও একই সুরে রাজ্য বিজেপিকে তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, কিছু বিরোধী দল আছে যারা উন্নয়ন চায় না, বাংলার বিসর্জন চায়। দিল্লিকে লিখে বলে টাকা দেবে না। কেন এটা কি ওদের পৈত্রিক জমিদারির টাকা? কেন্দ্র আমায় বলে এক টাকাও দেব না। তাহলে আমরাও বলতে পারি জিএসটি দেব না। ১০০ দিনের টাকা ফিরিয়ে দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও। বাড়ি তৈরির টাকা দিতে হবে। গ্রামীণ রাস্তা তৈরির টাকা দিতে হবে। ওরা মানুষকে প্রতারিত করছে।” একই সঙ্গে আদিবাসী সমাজকে আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “১০০ দিনের টাকা বিজেপির টাকা নয়। টাকা না দিলে আন্দোলনে নামুন তীর ধনুক নিয়ে আপনারা রাস্তায় নামবেন। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব।”
এছাড়াও জঙ্গলমহলের উন্নয়নকে তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এক সময় এই জঙ্গলমহলে মানুষ রাস্তায় হাঁটতে ভয় পেত। ছেলেমেয়েরা পড়তে যেতে পারত না। এখন মানুষ শান্তিতে আছেন। আমরা আদিবাসীদের অধিকার দিয়েছি। আদিবাসী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য বঞ্চিত হবে না। আমি টাকা দেব।” তিনি আরো জানান, “আজ বীরসা মুন্ডার ছটা মূর্তি উদ্বোধন করা হয়েছে। ঝাড়গ্রামে ৩২ কোটির বেশি টাকার ২০ টা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রচুর শিলন্যাস করা হল। ১০০০ আদিবাসী বন্ধুদের ধামসা মাদল তুলে দেওয়া হচ্ছে। ১৮ লক্ষ জাতি শংসাপত্র পেয়েছেন। আগে জাতি শংসাপত্র পেতেন না। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ৬০০ আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৫০ হাজার আদিবাসীকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি জানান, “ঝাড়গ্রামে এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় চাষের জন্য অসুবিধা হচ্ছে। তবে আমি তা দেখছি। আরও বেশি পুকুর কাটতে হবে। ২০২৪ এর শেষের দিকে প্রত্যেকের বাড়িতে খাবার জল পৌঁছে যাবে।”
Be the first to comment