করোনার জোড়া টিকা সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। প্রথম তিন পর্যায়ের টিকা-প্রাপকের তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত এখন সরকার। আর এই পরিস্থিতিতে আগামী, সোমবার, ১১ জানুয়ারি, বিকেলে দেশের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, আমজনতার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হবে সেই বৈঠকে।
শুক্রবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, অপেক্ষার অবসান হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে হবে। যদিও দেশএর প্রায় সব রাজ্যেই এখন চলছে ড্রাই রান। বাদ নেই বাংলাও। এই পরিস্থিতিতে কত তাড়াতাড়ি সাধারণ মানুষের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া যাবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আশা রাখছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজও আমরা শুরু করে দিতে পারব।’
কিন্তু আমি-আপনি নিজের জন্য, সন্তানের জন্য, পরিবারের জন্য কবে পাব ভ্যাকসিন? এই মুহূর্তে দেশবাসীর মনে সবচেয়ে অভিন্ন সাধারণ প্রশ্ন সম্ভবত এটাই। যদিও এর উত্তর স্বাস্থ্যকর্তা থেকে কর্পোরেট-কর্তা কিংবা ভ্যাকসিন ব্যবসায়ী, কারও কাছেই নেই। আজ রাজ্যজুড়ে কোভিড ভ্যাকসিনের ড্রাই-রানের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্যের ছ’লক্ষ চিকিৎসাকর্মীর জন্য শুক্রবার কিছু ভ্যাকসিন পাচ্ছি বটে। কিন্তু তা কত পরিমাণে, জানা নেই এখনও।’ ফলে রাজ্যের বাকি সাড়ে ন’কোটি আমজনতা কবে ভ্যাকসিন পাবে, সে কষ্টকল্পনায় আর যেতে চাননি তিনি।
বস্তুত এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই, এমনকী অনুমোদিত দু’টি ভ্যাকসিন–কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের নির্মাতা সংস্থা যথাক্রমে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকও মুখে কুলুপ এঁটেছে। যদিও ওই দু’টি সংস্থা সূত্রে এবং ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আগামী ছ’-সাত মাসেও পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে আমার-আপনার কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন কিনতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পুজোর সময়ে কিংবা ২০২১-এর শেষে হয়তো খোলা বাজারে আসতে পারে এই দু’টির পাশাপাশি আরও কয়েকটি ভ্যাকসিন। জাইকোভ-ডি কিংবা স্পুটনিক-ভি অথবা পঞ্চম কোনও ভ্যাকসিনের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ বাজারজাত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
ভারত বায়োটেকের এক এগজিকিউটিভ জানাচ্ছেন, ঠিক রয়েছে, প্রথমে এক কোটি চিকিৎসাকর্মী, তার পরে তিন কোটি পুলিশ-সহ প্রথম সারির কোভিড-যোদ্ধা এবং তারও পরে বয়স্ক ও কো-মর্বিড মানুষ নিয়ে ২৬ কোটি দেশবাসীকে নিখরচায় কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। এই ৩০ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন ৬০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ, সরকারকে যার সরবরাহ সবচেয়ে আগে সিরাম ও ভারত বায়োটেক নিশ্চিত করবে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এগজিকিউটিভ বলেন, ‘মনে রাখা দরকার, দু’টি সংস্থা মিলিয়ে মাসে ছ’কোটির বেশি ডোজ উৎপাদন করতে পারবে না। অর্থাৎ প্রথম দফায় ৩০ কোটি মানুষের টিকাকরণেই অন্তত ১০ মাস লাগবে। তার পর তো খোলা বাজার।’
এর পরেও অবশ্য বিপুল সংখ্যক ওষুধ ও প্রতিষেধক ব্যবসায়ীও দাবি তুলেছেন, ঝুঁকি বিচার করে তাঁদেরও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হোক টিকা। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে চিঠিও লেখা হয়েছে বলে জানান ওষুধ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘আমার মনে প্রশ্নটা তো রয়েছেই। পরিচিতরাও জিজ্ঞাসা করছেন, কবে খোলা বাজারে মিলতে পারে ভ্যাকসিন। উত্তরটা অবশ্য জানা নেই।’ বাগরি মার্কেটে যাঁরা সিরাম ও ভারত বায়োটেকের স্টকিস্ট বা ডিস্ট্রিবিউটর, তাঁরাও জানেন না এর জবাব।
Be the first to comment