আমেরিকার চোখরাঙানি সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেনার চুক্তিতে সই করে ফেলল ভারত।
শনিবার দিল্লিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের ফাঁকে এই চুক্তি সই হয়েছে। ৫৪৩ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকার এই চুক্তির আগে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থায় এত বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করেনি।
সরকারি প্রোটোকল মানতে গিয়ে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় যাতে ‘নষ্ট না হয়’, সে জন্য বেশ কিছু রদবদল করা হয়েছে পুতিনের এই সফরে। রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠান বা রাজঘাটে মহাত্মা গাঁধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি রুশ প্রেসিডেন্ট। তার পরিবর্তে শুক্রবার মোদীর সঙ্গে নৈশভোজে নির্ধারিত ৩০ মিনিটের বদলে তিন ঘণ্টা ধরে একান্তে আলোচনা করেন পুতিন। এ দিন সকালেও বেশ কিছু ক্ষণ কথা হয় দু’জনের।
ক’দিন আগেই বায়ুসেনা প্রধান, বি এস ধানোয়া এস-৪০০-কে ‘গেমচেঞ্জার’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভারতের হাতে এলে উপমহাদেশের খেলাটাই ঘুরে যাবে। রুশ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থায় শত্রু দেশের যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন চিহ্নিত করে তাকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। এর পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। যার অর্থ, পাকিস্তানের সব বায়ুসেনা ঘাঁটিই ভারতের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।
বাধা ছিল আমেরিকার চোখরাঙানি। গত সপ্তাহেই এই কারণে চিনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ট্রাম্প। তা এড়িয়েই পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই চুক্তিকে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা।
এই ভারসাম্য রক্ষা করতেই গত কয়েক মাসে নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগেই রাশিয়ার সঙ্গে পাকা কথা হয়ে গিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও আমেরিকায় গিয়ে বুঝিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থেই হাতে এস-৪০০ আসা প্রয়োজন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ চুক্তি সইয়ের পরে মার্কিন দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, মার্কিন সহযোগী রাষ্ট্রগুলির ক্ষতি করা নিষেধাজ্ঞা আইনের উদ্দেশ্য নয়। আইনে নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড়ের যে ধারা রয়েছে, তাতে প্রতিটি চুক্তিকে আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখা হয়। ফলে আগেই নিষেধাজ্ঞার উপরে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ভারতীয় নভশ্চরদের মহাকাশে যাওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েও শনিবার চুক্তি হয়েছে। রুশ মহাকাশযানে চড়িয়ে এক বা একাধিক ভারতীয় নভশ্চরকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এর ‘রাশিয়ান অরবিট সেগমেন্ট’-এ যেতে দিতে রাশিয়া রাজি। মস্কোর মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’ এই প্রশিক্ষণ দেবে।
Be the first to comment