সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হয়েছে ঝড়বৃষ্টি। এতে এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী রাজ্যের ৬ জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হল মোট ২৭ জনের। সবচেয়ে মানুষের মৃত্যু হুগলিতে। মৃতদের অধিকাংশই মাঠে কাজ করছিলেন। এই দুর্ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে টুইট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
প্রসঙ্গত, শোকপ্রকাশের পাশাপাশি নিহতদের ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, তৃণমূল সূত্রে খবর, ৯ ও ১০ জুন বজ্রপাতে নিহত সবার বাড়ি যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী টুইটে লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বজ্রপাতে যাঁরা নিজের স্বজন হারালেন তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই। প্রার্থনা করি, আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে লেখেন, “বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ভীষণ দুঃখজনক। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমাবেদনা রইল। প্রার্থনা করি আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন।”
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার মির্জাপুর নওয়া এলাকায় মাঠে কাজ করছিলেন অনেকেই। ঝড়বৃষ্টি আসায় মাঠেই একটি ঘরে আশ্রয় নেন বহু মানুষ। সেখানেই বাজ পড়ে। এত মৃত্যু হয় ২ জনের। আহত হন অনেকে। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে জঙ্গিপুর হাসপাতালে। জেলার আরও কয়েকটি জায়গাতেও বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ জনের। সবমিলিয়ে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয় জেলায়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২ জনের। চন্দ্রকোনার জাড়া এলাকায় বজ্রপাতে মারা যায় অরুণ মন্ডল নামে এক ব্যক্তি। অপরদিকে চন্দ্রকোনার হিতধরপুরে মৃত্যু হয় অর্চনা রায় নামের এক মহিলার। স্থানীয় সূত্রে খবর, অরুণ মন্ডল পেশায় কৃষক। আজ বিকেলে বাড়ির পাশে তিল ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ করার সময় হঠাৎই বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা তাঁকে ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে অর্চনা রায় মাঠে কাজ করছিল, সেইসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও পর্যন্ত মোট ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাঁকুড়ার দুটি জায়গায় বাজ পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিন বিকেলে নবদ্বীপ থানার রানীরচড়া চাকীপাড়ায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় এক যুবকের। নাম, মধুসূদন দাস। বাড়ি রানীরচড়ার দক্ষিণ চাকীপাড়ায়। পেশায় কাঠমিস্ত্রি মধুসূদন এদিন দুপুরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে,গঙ্গার ঘাটের কাছে একটি গাছের নিচে বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্পগুজব করছিলেন। বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির শুরু হলে অন্যান্য বন্ধুরা সবাই চলে গেলেও সেখানেই বসে ছিলেন মধুসূদন। সেসময় হঠাৎই একটি বাজ পড়ে। সেই বজ্রপাতেই গুরুতর জখম হয় ওই যুবক। নবদ্বীপ থানার পুলিস তাকে উদ্ধার করে প্রতাপনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিন বাজ পড়ে হুগলি জেলায় মৃত্যু হল মোট ৯ জনের। এদের মধ্যে আরামবাগ মহকুমায় মারা গিয়েছেন ৫ জন। পুলিস সূত্রে খবর, আরামবাগ মহকুমায় মৃতরা হলেন হেমন্ত গুছাইত (৪২),মালবিকা গুছাইত(৩২), কানাই লহরী(৭৬), আনন্দ রায়(৩৫)ও শিশির অধিকারী (৭২)। আহত হয়েছেন জ্যোৎস্না অধিকারী ও মালতী লহরী। এদের মধ্যে হেমন্ত ও মালবিকা স্বামী ও স্ত্রী। আবার শিশির ও জ্যোৎস্না স্বামী ও স্ত্রী।
অপরদিকে গোঘাটের নরসিংহবাটীতেও বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় আনন্দ রায়(৩৫) নামে এক ব্যক্তির। জানা গিয়েছে ,ঘটনার সময় তিনি জমির কাজ করতে মাঠে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে খানাকুলের বালিপুরের বাসিন্দা একই ভাবে কাজে ছিলেন মাঠে। সেই সময়েই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় হেমন্ত ও মালবিকার।
এছাড়াও হুগলি দাদপুর ব্লকে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে হারুন রশিদ নামে এক ব্যক্তির। কিরন রায় নামে এক মহিলার বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে দাদপুরের নবগ্রামে। এছাড়াও হরিপাল ব্লকে মারা গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি, সিঙ্গুর ব্লকে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে সুস্মিতা কোলে নামে এক মহিলার।
Be the first to comment