ট্রাম্পের দাবি ‘সম্প্রতি কথা হয়েছে, চিন নিয়ে মুড অফ মোদীর’

Spread the love

লাদাখ নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোনও কথা হয়নি। আধিকারিকদের সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। যদিও চিনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব মেটাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেওয়ার পর ট্রাম্প ফের বলেছেন, চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে মুড ভালো নেই মোদীর।

আধিকারিকদের দাবি, শেষবার গত ৪ এপ্রিল কথা হয়েছিল এই দুই রাষ্ট্রনেতার। সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর কোনও কথা হয়নি। দাবি করা হয়েছে, ‘২০২০ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাম্প ও মোদীর মধ্যে শেষবার কথা হয়েছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে।’ কোভিডের চিকিত্‍‌সায় ব্যবহৃত এই ওষুধ আমেরিকায় পাঠিয়েছিল ভারত।

তবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাবার্তায় দাবি করেছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারত ও চিনের মধ্যে বিরাট দ্বন্দ্ব নিয়ে মুড ভালো নেই মোদীর। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘ভারতে ওরা আমায় পছন্দ করেছিলেন। এই দেশে সংবাদমাধ্যম আমাকে যতটা পছন্দ করে, তার থেকে ওরা আমায় বেশি পছন্দ করে বলে আমার ধারণা। এবং আমিও মোদীকে পছন্দ করি। আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে খুবই পছন্দ করি। তিনি একজন মহান ভদ্রলোক। ভারত ও চিনের মধ্যে বিরাট দ্বন্দ্ব রয়েছে। দুই দেশের প্রত্যেকটিকে জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়ন। দুই দেশেরই খুব শক্তিশালী সেনাবাহিনী। ভারত খুশি নয়, হয়তো চিনও খুশি নয়।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটুকু বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর মোদীর সঙ্গে কথা বলেছি। চিনের সঙ্গে যা চলছে, তা নিয়ে তিনি খুশি নন।’

এক দিন আগেই চিনের বিদেশ মন্ত্রক দাবি করেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ। এ দিকে, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা মেটাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবও বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

কিন্তু এই ‘শান্তিপূর্ণ’ রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না বাস্তব চিত্র। সূত্রের খবর, লাদাখ সেক্টরের অন্তত চারটি স্ট্যান্ডঅফ পয়েন্টে সেনা বাড়াচ্ছে ভারত-চিন, দু’পক্ষই। পরস্পরের বিরুদ্ধে তাল ঠুকছে তারা। লাদাখ সেক্টরের তিনটি স্ট্যান্ডঅফ পয়েন্ট গালওয়ান উপত্যকার কাছে, আর চতুর্থটি প্যানগং লেকের কাছে। চিনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ) এই চারটি পয়েন্টেই সেনা বাড়িয়েছে। প্যানগং লেকের কাছে ভারতের অবজারভেশন পোস্ট এবং গালওয়ান নালার কাছে ৬০ মিটার লম্বা ব্রিজ বানানোর দিকে দিনরাত কড়া নজর রেখে চলেছে সেই চিনা সেনা।

এদিকে, কারাকোরাম গিরিপথের দক্ষিণে, শেষ মিলিটারি পোস্ট দৌলত বেগ ওল্ডি অবধি পৌঁছতে ২৫৫ কিমি রাস্তা এবং গালওয়ান ব্রিজ তৈরির কাজ বন্ধ রাখেনি ভারত। নয়াদিল্লির এই নির্মাণ সফল হলে লাদাখ সেক্টরে ভারত তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে, আর তাতেই আপত্তি চিনের। ভারত অবশ্য সেই আপত্তির তোয়াক্কা না করেই কাজ চালাচ্ছে, সেই সঙ্গে এই চারটি স্ট্যান্ডপয়েন্টে ভারতও সেনা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।

এক ভারতীয় আধিকারিকের কথায়, ‘ভারতের নিজের এলাকায় রাস্তা, সেতু বা এয়ারফিল্ড তৈরি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। পূর্ব লাদাখে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ ভারত বন্ধ করবে না।’

চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলছেন, অন্যদিকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিফ অফ ডিফেন্স সার্ভিসেস জেনারেল বিপিন রাওয়াত মিলিতভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতিতে নজর রাখছেন। পরিস্থিতি যে মোটেই শান্তিপূর্ণ নয়, তা বোঝা যাচ্ছে আকসাই চিন এলাকায় নাগরি গুনসা বিমানবন্দরে চিনা বায়ুসেনার জে-১১ জেট ওড়ানো দেখেই। তবে, কি যুদ্ধের জন্যই প্রস্তুত হচ্ছে দু’দেশ?

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*