চির ব্যস্ত রাজনীতিবিদ। ভোরের আলো ফুটলেই শুরু হয়ে যেত অবিরাম দৌড়। তবে রাজ্য রাজনীতি তাঁর কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ঠিক তেমনই তাঁর কাছে প্রিয় ছিল গড়ের মাঠ। এহেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশেষে থামলেন। যে ময়দান, যে প্রিয় মোহনবাগান তাঁর হৃদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল সেই ক্লাবের থেকে কিছু দূরে এসএসকেএম হাসপাতালে যুদ্ধ হারলেন সবুজ-মেরুনের সহ-সভাপতি।
ময়দানের সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তির প্রয়াণ হলে ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়ে থাকে। গঙ্গাপাড়ের ক্লাব মোহনবাগানও সেই রীতি মেনে চলছে। এ দিন ক্লাবের সচিব সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত এবং প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিত চট্টোপাধ্যায়। শেষ বারের মতো সুব্রতবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর দেহ সবুজ-মেরুন পতাকায় মুড়িয়ে দেন মোহনবাগান কর্তারা।
তবে তিনি তো শুধু সবুজ-মেরুনের সহ-সভাপতি ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ক্লাব সচিব সৃঞ্জয় বসুর ছিল পারিবারিক সম্পর্ক। তিনি বলছিলেন, “উনি আমাকে জন্মাতে দেখেছেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক কেমন ছিল। শুধু ক্লাব সংক্রান্ত নয়, ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হলেই ওঁর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছি। সেই মুহূর্তগুলো আমার সঙ্গে থেকে গেলেও, ওঁর সান্নিধ্য আর পাব না। এটা আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে অপূরণীয় ক্ষতি।”
সদ্য প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রীর মোহনবাগান প্রেম নিয়েও একই রকম আবেগপ্রবণ ক্লাব সচিব। সৃঞ্জয় যোগ করলেন, “রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তিনি মোহনবাগানের সব খবর রাখতেন। সুযোগ পেলেই চলে আসতেন ক্লাবে। রাজ্যের প্রথমসারির মন্ত্রী হলে এই ক্লাবের লনে বসে প্রবীণ সদস্যদের আড্ডা দিতেন তিনি। সেই সময়গুলো আমাদের মনে থাকে যাবে। তবে ওঁর মৃত্যুর মধ্যেও ভাল দিক হল উনি সুস্থ ছিলেন, কাজের মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন। সেই অবস্থাতেই চলে গেলেন। ওঁকে ভুগতে হল না, এটাই একটা ভাল ব্যাপার।”
প্রয়াত সুব্রতর সঙ্গে আর এক সুব্রতর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। যাকে বলে একেবারে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। এহেন সুব্রত ভট্টাচার্যের মন ভারাক্রান্ত। এমন দিনে প্রাক্তন ডিফেন্ডার বলছিলেন, “১৯৭৮ সালে একবার ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আমাদের খুব গোলমাল বেধে যায়। ঝামেলা এতটাই বড় আকার ধারণ করেছিল যে আমরা অনুশীলনে নামতে চাইছিলাম না। শেষ পর্যন্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সুব্রত দা আসরে নেমেছিলেন। আমাদের সমস্যাগুলো বুঝে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এমন মানুষ ময়দানে আর আসবে না।”
Be the first to comment