দিনে দুপুরে শহর থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল এক অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া

Spread the love

দিনে দুপুরে শহর থেকে নিখোঁজ হয়ে গেল এক অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। ২৬ অগস্ট রবিবার সন্ধে থেকে নিখোঁজ হয়েছে মুকুন্দপুর সি ব্লকের বাসিন্দা জিৎ মাহাত।

কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল যে জিৎ একেবারে বেপাত্তা হয়ে গেল?

দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল জিতের পরিবারের সঙ্গে। তার দিদি জানিয়েছেন, “২৫ অগস্ট শনিবার রাত ৩টে নাগাদ পড়াশোনা শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছিলাম। বিছানায় ভাইকে সরাতে গিয়ে ওর প্যান্টের পকেটে হাত লাগে। বুঝতে পারি কিছু একটা রয়েছে। প্রথমে কিছু বলতে চায়নি। তারপর মা-বাবাকে ডাকায় তখন জানতে পারি সঙ্গে রয়েছে মোবাইল ফোন। বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সবাই। কারণ বাড়ি থেকে কোনও ফোন ওকে দেওয়া হয়নি। ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম কে ফোন দিয়েছে। কিছু বলেনি। বুঝতেই পারছেন তখন অত রাত। বাবাও বিশেষ কিছু না বলে ফোনটা নিয়ে চলে যায়।”

জিতের দিদি আরও জানিয়েছেন, পরের দিন ছিল রাখি। বাড়িতে আরও ভাইবোনরা এসেছিল। সারাদিন অনেক মজা করলাম আমরা। খুব স্বাভাবিক ছিল ভাই। সোমবার স্কুলে ওর ভূগোল পরীক্ষা ছিল। সন্ধেবেলা ক্যারাম খেলতে দেখে মা ওকে টিউশন পড়তে যেতে বলে। সেদিন ভাইয়ের সন্ধেবেলায় টিউশন যাওয়ারও কথা ছিল। সাতটা নাগাদ পড়তে বেরিয়ে যায় ভাই। আমাদের বাড়ি থেকে স্যারের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি হলে মিনিট সাতেক। মা স্যারকে ফোনও করেছিল এটা বলার জন্য যে ভাই পড়তে গিয়েছে। কিন্তু সে সময় ফোন ছিল নট রিচেবল। তাই আর ফোন করা হয়নি। এরপর ছুটির সময়ে আমি স্যারকে ফোন করে জানতে চাই ভাইয়ের ছুটি হয়েছে কিনা। তখন জানতে পারি ভাই পড়তেই যায়নি।”

ইতিমধ্যেই পূর্ব যাদবপুর থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন জিতের পরিবার। তবে কে বা কারা জিতকে ওই ফোন দিয়েছে সে ব্যাপারে কিছু জানেন না ওই কিশোরের বাবা-মা কিংবা দিদি। রবিবার বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সঙ্গে কোনও ফোন নিয়েও যায়নি জিৎ। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ফোনের সিমগুলো আপাতত ট্র্যাক করার চেষ্টায় রয়েছে লালবাজার। কাদের নামে ওই সিম তোলা হয়েছে সেই ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছেন জিতের দিদি। এ ছাড়া খোঁজ নেওয়া হচ্ছে জিতের বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতেও।

কিন্তু জিৎ কি খুব একগুঁয়ে ছিল? বা খুব আবেগপ্রবণ?

এই প্রসঙ্গে জিতের দিদি জানিয়েছেন, “ভাই বরাবরই খুব শান্ত, ওবিডিয়েন্ট। এর আগে কখনও এমন করেনি ও। আর মা-বাবা আমাদের খুব ভালোবাসে। যেটুকু বকাঝকা করে সেটা তো সব বাবা-মাই করেন। ইনফ্যাক্ট মা-বাবার কাছে তো আমরাই সব। আর ফোন পাওয়া নিয়েও ওকে কোনও বকাঝকা করেনি কেউ যাতে ও বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমরা তো বুঝতেই পারছি না ও কোথায় গেল। আর কেনই বা গেল।”

মারণ গেম ব্লু হোয়েলের রেশ কাটতে না কাটতেই শহরে নতুন করে হানা দিয়েছে ‘মোমো গেম চ্যালেঞ্জ’। আর জানা গিয়েছে জিৎ নিজেও মোবাইলে গেম খেলত। এ প্রসঙ্গে জিতের দিদি বলেন, “আমি ভাইয়ের ওই ফোনটা ঘেঁটে দেখেছি। ওখানে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ কিছুই ছিল না। আজকাল যেসব বন্ধুদের গ্রুপ বানিয়ে গেম খেলা যায় সেইরকম গেমই ছিল। ব্লু হোয়েল বা মোমো গেম সবটাই তো ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে আসে। কিন্তু ফোনে তো সেই অ্যাপগুলোই ছিল না। তবে হ্যাঁ ভাই একটু গেম অ্যাডিক্ট ছিল। মাঝে মাঝে আমাদের ফোন থেকেও গেম খেলত। তবে সেটা বাড়াবাড়ি রকমের কিছু নয়।”

আচমকাই এ ভাবে জিতের উধাও হয়ে যাওয়ায় তার পরিবারের পাশপাশি ধন্দে পড়েছে পুলিশও। জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছ তারা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী কোনও খোঁজ মেলেনি জিতের। সঙ্গে কোনও ফোনও নিয়ে যায়নি সে। তাই ট্র্যাক করা যায়নি তার লোকেশনও। জিতের দিদি জানিয়েছেন, আপাতত স্থানীয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*