শুধুমাত্র ‘দায়’ রক্ষার্থেই এবারের মুদিয়ালির পুজো

Spread the love

আমি ওই শুনি তার পদধ্বনি- সে যে আসে আসে আসে। শারদ শুভ্র শেফালি সুবাসে মা-এর আগমনের প্রতীক্ষায় আমরা। করোনা আছে-হয়তো পুজোর সময়েও থাকবে। কিন্তু দুর্গাপুজোও থাকবে, হয়তো একটু অন্যভাবে। হোক না স্বল্প পরিসরে, হোক না কম বাজেটের পুজো। কিন্তু উৎসবের আনন্দকে তো আর ম্লান হতে দেওয়া যায় না।

শুধু আনন্দ নয়, এই দুর্গোৎসবের একটা আর্থ-সামাজিক দিক আছে। প্রতিমা শিল্পী, প্যান্ডেল শিল্পী, শোলা শিল্পী, ঢাকি থেকে শুরু করে বহু মানুষের রুজি এই বাৎসরিক উৎসবের উপর নির্ভর করে।

তাই এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার সামাজিক ‘দায়’ আমার আপনার সকলের। এটা আমাদের নাগরিক কর্তব্য, বললেন মুদিয়ালি ক্লাবের কর্মকর্তারা। স্বাধীনতারও আগে ১৯৩৫ সাল থেকে দক্ষিন কলকাতার এই ক্লাব পুজো করে আসছে। ৮৬ তম বর্ষে পা রাখলো তাদের পুজো। মুদিয়ালির পুজো মানে ঐতিহ্য, মুদিয়ালির পুজো মানে লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা, মুদিয়ালির পুজো মানে মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে মুগ্ধতা, পরিতৃপ্তি।

কিন্তু করোনা আবহে তারা হয়তো পুজো করতেনই না। কিন্তু তারা অনুভব করেন তাদের ‘দায়’। কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে দায় রক্ষার্থেই এবারের পুজো। না এ দায় কেউ তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়নি। হৃদয়ের সুক্ষ অনুভূতি দিয়ে মানুষের মনের গভীরের যন্ত্রণা বুঝে নেন তাঁরা। মনে পড়ে সলিল চৌধুরীর লেখা শিশুদের গানের কয়েকটি লাইন- “কাঁদছো কেন আজ ময়না পাড়ার মেয়ে——————– আজ হাসি খুশি মিথ্যে হবে তোমাকে বাদ দিয়ে”। হ্যাঁ, সমাজের একাংশের মানুষকে বিষাদের অন্ধকারে রেখে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠার মিথ্যা প্রয়াস এঁরা করছেন না। তাই তো তাদের পুজোর বিষয়বস্তু ‘দায়’। এই পুজোকে ঘিরে যে সমস্ত মানুষ আছে তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁদের এই প্রয়াস। আর তাই তো মৃন্ময়ী পায়ের পাশাপাশি চিন্ময়ী মাতৃ মূর্তির বরণ প্রাধান্য পায় তাঁদের কাছে। একথা তাঁদের মুখেই মানায় যে ” বরণ করবো মানব প্রতিমা। খুশি হবে জানি দুর্গা মা”।।

তাই ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার মুদিয়ালি ক্লাব প্রদীপ জ্বেলে সসম্মানে বরণ করে নিলেন পরিচারিকা, শ্রমিক বন্ধুদের। তাঁদের হাতে তুলে দিলেন যথাসাধ্য সামগ্রী। অতিমারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও যে তাঁদের অন্যতম দায় সেকথাও মনে করিয়ে দিলেন ক্লাব কর্তারা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল করতে হয়েছে স্যানিটাইজার টানেলের অর্ডার। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিকে প্রধান্য দিয়ে বাজেটে টান থাকা সত্ত্বেও ‘দায়’ থাকার কারনে বিশেষ স্যানিটাইজার মেশিনের উদ্বোধনও হলো রবিবার। শুধু যারা ঠাকুর দেখতে আসবেন তাঁদের জন্য নয়, যাঁদের তিল তিল পরিশ্রমে রূপ পাবে মাতৃ মূর্তি, আলোয়-প্যান্ডেলে সেজে উঠবে চারদিক অর্থাৎ যারা না হলে উৎসবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় না তাঁদের সুস্থ রাখাও আমাদের ‘দায়’। তাই ‘দায়’ এই থেকেই এবং এই ‘দায়’ নিয়েই এবারের মুদিয়ালির পুজো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*