জেলায় জেলায় ঘুরে একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড তথা অধুনা বিজেপি নেতা মুকুল রায় যখন কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দিকে আক্রমণ শাণাচ্ছেন, তখন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুই তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে হাতিয়ার তুলে দিলেন বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
বাবা দল ছাড়লেও শুভ্রাংশু রায় এখনও স্বমহিমায় বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি যুব তৃণমূল সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় সেই চিঠিকেই এখন ব্রহ্মাস্ত্র করে নিয়েছেন অভিষেক।
প্রসঙ্গত, বিজেপি-র যুব মোর্চার সমাবেশে যোগ দিতে গত অগস্টে কলকাতায় এসেছিলেন বিজেপি সভাপতি। মেয়ো রোডের সেই সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কারও নাম সরাসরি মুখে না আনলেও অমিত শাহ বলেছিলেন, বিভিন্ন যোজনার আওতায় কেন্দ্র বাংলাকে যে বিপুল টাকা দিচ্ছে তার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ‘ভাতিজার’ কাছে। অমিতের হিসাব অনুযায়ী কেন্দ্রের পাঠানো ৩.৫৯ লক্ষ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে বাংলায়।
মেয়ো রোডে বিজেপি সভাপতির সভা শেষ হতে না হতেই ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিল বাংলার শাসক দল। তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছিলেন, অমিত শাহ বাংলাকে অপমান করেছেন। ৭২ ঘন্টার মধ্যে তিনি ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে। বিজেপি সভাপতি তা না করায় অভিষেকের তরফে তাঁকে প্রথমে আইনি নোটিস পাঠানো হয়। পরে যুব তৃণমূল সভাপতি নিজে গিয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে অমিত শাহের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এরই মধ্যে অভিষেকের কাছে বিস্ফোরক চিঠিটি পাঠান মুকুল-পুত্র। চিঠিতে শুভ্রাংশু লেখেন, “মেয়ো রোডের সভায় অমিত শাহ যে মন্তব্য করেছেন, তা শুনে স্তম্ভিত হয়েছি। অমিত শাহ ফাঁস করেছেন, আপনি নাকি দুর্নীতি ও বেআইনি ব্যাপারে জড়িত এবং কেন্দ্রের বরাদ্দ ৩.৫৯ কোটি টাকা তছরূপ করেছেন।” চিঠিতে শুভ্রাংশু আরও লিখেছেন, এ সব অভিযোগের আদৌ কোনও সত্যতা রয়েছে কিনা যেন তাঁকে জানান অভিষেক।
দলীয় স্তরে এ ধরনের চিঠি চালাচালির ব্যাপারটা অন্যরকম বইকি! যদিও এ ব্যাপারে শুভ্রাংশুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অমিত শাহ যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তাতে অনেকের মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। যদিও আমি জানি এ সব অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। তাই আমার নেতাকে চিঠি লিখে সত্যিটা জানাতে বলেছি।”
অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর বক্তব্য, “এ সব চিঠি থেকেই বোঝা যাচ্ছে মেয়ো রোডের সভায় অমিত শাহ যে সব মন্তব্য করেছেন তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানহানি হয়েছে। দলের বিধায়কই তাঁর কাছে চিঠি দিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। শুধু শুভ্রাংশু নয়, অনেকেই তা করছেন। শুভ্রাংশু ও অন্যদের চিঠি আদালতে শুনানির সময় পেশ করা হবে।”
রাজনীতিক মহলের অনেকের মতে, গোটা ব্যাপারটায় তৃণমূলের কৌশল পরিষ্কার। অমিত শাহর বিরুদ্ধে মামলায় মুকুল পুত্রের চিঠি ব্যবহার করে বিজেপি-কে চরম অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছে বাংলায় শাসক দল।
বস্তুত তৃণমূলের সঙ্গে মুকুল রায়ের সম্পর্ক এখন আদায় কাঁচকলায় হলেও অভিষেকের সঙ্গে শুভ্রাংশুর বোঝাপড়া ইদানীং বেশ ভাল। সম্প্রতি অভিষেকের বাসভবনের সামনে বিজয়ার অনুষ্ঠানেও শুভ্রাংশুকে দেখা যায়। তা ছাড়া মাস দুয়েক আগে শুভ্রাংশু যখন অসুস্থ হয়ে বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তখনও তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ছাড়ার ব্যাপারে শুভ্রাংশুকে নিয়ে যাবতীয় জল্পনায় সে ঘটনা তখনই জল ঢেলেছিল। এ বার মুকুল পুত্রের চিঠি ফাঁস আরও স্পষ্ট করে দিল, বাবা নয়, নেতা অভিষেকের সঙ্গেই রয়েছেন শুভ্রাংশু।
Be the first to comment