গরীব পরিবার থেকে টাকার বিনিময়ে শিশুদের তুলে এনে পাচার করা হত মার্কিন মুলুকে। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে সেই শিশুদের কিনে নিত আমেরিকার কিছু ব্যবসায়ী। এই ভাবে প্রায় ৩০০ শিশু পাচার হয়েছে আমেরিকায়। তদন্তে নেমে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছে মুম্বই পুলিশ। ধরা পড়েছে এই আন্তর্জাতিক শিশু পাচারচক্রের মাথা রাজুভাই গামলেওয়ালা ওরফে রাজুভাই।
পুলিশ জানিয়েছে,বছর পঞ্চাশের রাজুভাই গুজরাটের বাসিন্দা। ২০০৭ সাল থেকে এই পাচারচক্র চালাচ্ছেন তিনি। আমেরিকার কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার লেনদেন রয়েছে। প্রতিটি শিশু বিক্রির জন্য রাজুভাই দাম হাঁকেন ৪৫ লক্ষ টাকা। প্রথমে শিশুদের পাসপোর্ট ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয় খরিদ্দারদের কাছে। পছন্দ হলে তবে টাকা নিয়ে রফা হয়।
জেরায় রাজুভাই জানিয়েছেন, সাধারণত গুজরাটের গরীব ঘর থেকে ১১-১৬ বছর বয়সী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের তুলে এনে পাচার করা হত। চরম অর্থাভাবে পড়েই পরিবারের লোকেরা সামান্য টাকার বিনিময়ে তাঁদের সন্তানদের তুলে দিতেন রাজুভাইয়ের হাতে। আমেরিকার খরিদ্দারদের থেকে নির্দেশ পেলেই রাজুভাই তার সহযোগীদের গরীব ঘর খুঁজে বার করতে বলতেন যারা শিশু বিক্রি করতে রাজি। পুলিশ জানিয়েছে, পাচার হওয়া শিশুদের বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটা প্রথম প্রকাশ্যে আসে চলতি বছর মার্চ মাসে। মুম্বইয়ের অভিনেত্রী প্রীতি সুদ এবং তাঁর এক বান্ধবী এমন ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানান। প্রীতি জানিয়েছেন, তাঁর এক বান্ধবীর কাছ থেকে ফোন পেয়ে তিনি জেনেছিলেন মুম্বইয়ের একটি নামী সেলুনে দুই কিশোরীকে মেকআপ করানো হচ্ছে। তাদের আগলে রেখেছে জনা কয়েক গুণ্ডা প্রকৃতির লোক। প্রীতি মনে করেছিলেন ওই কিশোরীদের যৌন ব্যবসার কাজে লাগানো হবে। সেলুনে পৌঁছে তিনি চেঁচামেচি করতেই কিশোরীদের নিয়ে কয়েকজন চম্পট দেয়। দু’জনকে ধরে ফেলে সেলুনের লোকজন। তাদের জেরা করেই পুলিশ রাজুভাইয়ের মোবাইল নম্বর পায়। ধরা পড়ে পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত আরও চার জন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম আমির খান (২৬), তাজউদ্দিন খান (৪৮), আফজল শেখ (৩৫) এবং রিজওয়ান ছোটানি (৩৯)। ডিসিপি (জোন ৯) পরমজিৎ সিংহ দাহিয়া জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের আগে পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় ধরা পড়েছিলেন রাজুভাই। তার পর শিশু পাচারের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। রাজুভাইকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪ এবং ৩৭৩ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
Be the first to comment