পাহাড় আর চা-বাগান ঘেরা মুন্নার

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী

কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বত, সারি সারি অর্জুন এবং সবুজ চা-বাগান। তাই অনেকেই কেরলকে ঈশ্বরের নিজের দেশ বা God’s Own Countryও বলেন। পর্যটকদের কাছে কেরল মানেই কোথাও সমুদ্র আর দীর্ঘ উপকূল, কোথাও আবার সবুজ চা-বাগান।

রাস্তার পাশে চা-বাগানগুলোর মাঝে-মাঝে সোজা মাথা তুলে আকাশের সঙ্গে মিতালি পাতাতে ব্যস্ত সারি দেওয়া পাইন গাছ। আর পাইন গাছের কাণ্ডকে সস্নেহ বেষ্টনে জড়িয়ে ধরেছে গোলমরিচের লতাগুলো৷ যাত্রাপথে খানিক বিরতিতে রাস্তার ধারের ছোট্ট ঝুপড়ি চায়ের দোকানের গরম, সুস্বাদু মশলা চায়ে চুমুক দিতে-দিতে এই ঢেউ খেলানো সবুজের বাহার দেখতে দেখতে মনে হবে এ কোথায় এলাম! মুন্নার সবুজে মাখামাখি এক শহর।

কেরলের অন্যতম জনপ্রিয় হিল-স্টেশন হল মুন্নার। মুন্নারকে কেরলের কাশ্মীরও বলা হয়। মুধিরাপূজা, নাল্লাথানি এবং কুন্দালি নদীর স্রোত যেন এক হয়ে মিলেছে মুন্নারের ঠিক মাঝখানে এবং সম্ভবত এই নদীর কারণেই প্রাকৃতিকভাবে মুন্নারের আবহাওয়া, জীবজন্তু এবং গাছপালা অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে আলাদা। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢালে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মুন্নার শহরটি একসময়ের দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন অবসরযাপনের জায়গা ছিল। পাহাড়ের পর পাহাড়, চারপাশটা সবুজে ঢাকা। তার মধ্যে এদিক-ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘের ভেলা । বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে চা-বাগান, পুরোনো আমলের সব বাংলো, ছোট ছোট নদী, জলপ্রপাত এবং শীতল আবহাওয়া, এ-সবই এখানকার বৈশিষ্ট্য। মুখচোরা রোদ এখানে অভিমান করে লুকিয়ে থাকে। সবুজ পাহাড় আর চা বাগানের ঘেরাটোপে কেউ যেন বন্দি করে রেখেছে সবুজ সুন্দরীকে। কোচি থেকে ক্যাব নিয়ে তিন-চার ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় মুন্নার। যেতে যেতে দেখা মিলবে সুদৃশ্য দুটি জলপ্রপাত, স্পাইস গার্ডেন আর এলিফ্যান্ট রাইড পার্ক।

পাহাড়ের ঢালে ঢেউ খেলানো চা-বাগান কী তার অপরূপ শোভা। যাত্রাপথের সৌন্দর্য্যে চোখে জুড়িয়ে যায়, মন পায় প্রশান্তির ছায়া।

এইভাবে প্রথম দিনটা কাটে। পরেরদিন  মাতুপত্তি। মাতুপত্তি আসলে অনেকগুলো পাহাড়ের সারি। এর বুক চিরেই গড়ে উঠেছে মাতুপত্তি ড্যাম। এই কৃত্রিম হ্রদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে। ১৯৭০ সালে মুন্নারের এই ড্যামটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। এই ড্যাম এখন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, বন্যপ্রাণী আর পাখিদের অভ্যয়ারণ্যেও পরিণত হয়েছে।

 

ড্যামের স্থির নীলচে জলে সবুজ পাহাড়ের ছায়া, সারিসারি চা-বাগান, আর দূরে পাহাড়ের গায়ে ঘুমিয়ে থাকা গভীর বন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখানকার রোমাঞ্চই আলাদা। জোরে কথা বললেই অপর পার থেকে ফিরে আসে প্রতিধ্বনি। পর্যটকদের জন্য রয়েছে স্পিড বোটে করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ, রয়েছে প্যাডেল বোট। শান্ত এই হ্রদের পাড়ে কিছুক্ষন বসে থেকে কেরালা কফির স্বাদ আস্বাদন করুন। এখানে বোটিং করতে চাইলে প্রতি পাঁচজনের গ্রুপের জন্য প্রতি ১৫ মিনিটের খরচ ৩০০-৫০০ টাকা, সাধারণ বোটে ৭০০-১০০০ টাকা।

সন্ধ্যাবেলায় কেরালার প্রাচীন মার্শাল আর্ট “কলারিপায়াতু”। শিল্পীদের শারীরিক কসরৎ দেখবার মত।

পরেরদিন মুন্নার থেকে ৩২ কিমি দূরে টপ স্টেশন, মুন্নারের সর্বোচ্চ ভিউ পয়েন্ট। চারিদিকে পাহাড়, কিছু পথ হেঁটে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে  ভিউ পয়েন্ট। এইখানে দেখুন রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। নিচে রয়েছে থেনি শহর। পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের লুকোচুরি স্বপ্নরাজ্যে পৌছে দেয়। চারিদিকের সবুজের সমারোহ বলে শেষ করা যাবে না। সব মিলিয়ে চেনা জীবন হঠাৎই অচেনা। পরদিন ফেরা। স্পাইস গার্ডেন থেকে কিনুন নানা মশলা।

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই সেন্ট্রালে পৌঁছে ওখান থেকে ট্রেনে এরনাকুলাম টাউন পরের দিন সকালে। এরনাকুলাম টাউন থেকে মুন্নারের দূরত্ব সড়ক পথে ১৩০ কিলোমিটারের মতো।

কোথায় থাকবেন: কেরল পর্যটন দপ্তরের হোটেল আছে মুন্নারে। দেখে নিতে পারেন তাদের ওয়েবসাইট। এছাড়াও সারা মুন্নার জুড়ে আরও অনেক হোটেল, রিসর্ট রয়েছে।

কখন যাবেন: আগস্ট থেকে মার্চ মাস মুন্নার বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়। এখানে আবহাওয়া শীতল প্রকৃতির তাই সঙ্গে অবশ্যই যথেষ্ট গরম জামা রাখবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*