জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি। আলোচনা চলছে জাতীয় স্তরেও। রাজ্য বিজেপি নেতাদের দাবি, এই খুন রাজনৈতিক। RSS সদস্য হওয়াতেই স্ত্রী, শিশুপুত্র-সহ খুন করা হয়েছে বন্ধুপ্রকাশ পালকে কিন্তু তদন্তকারীদের তরফে নবান্নে যে রিপোর্ট এসেছে তা বলছে, বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে RSS যোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের সদস্যরাও এই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শিক্ষকের আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবরা পুলিশকে জানিয়েছেন RSS কেন, কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না বন্ধুপ্রকাশের। তদন্তে উঠে এসেছে শিক্ষকতার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নানা ব্যবসাতেও জড়িত ছিলেন তিনি। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনেরও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তদন্তে এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিজয়া দশমীর দিন দুপুরে জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতেই খুন হন বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) ও পুত্র অঙ্গন (৫) । ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের খুন করে আততায়ীরা। এরপরই বন্ধুপ্রকাশকে RSS কর্মী বলে দাবি করে জেলা এবং রাজ্য বিজেপি নেতারা। তাদের দাবি এই খুন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। RSS করার জন্যই প্রাণ গেল ওই শিক্ষকের।
বন্ধুপ্রকাশের মা মায়া পাল থাকেন সাগরদিঘিতে ৷ বড় মেয়ের বাড়িতে। ইতিমধ্যে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ছেলের RSS যোগের কথা অস্বীকার করেছেন মা। খুনের ঘটনা নিয়ে বন্ধুপ্রকাশের যে ভাই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন , তিনিও অনুরোধ করেছেন এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং না দিতে । বিউটির দাদা সাক্ষীগোপাল ঘোষ থাকেন রামপুরহাটে। তিনিও একই অনুরোধ করেছেন বলে দাবি পুলিশের। বন্ধুপ্রকাশ ঘনিষ্ঠ দীপ্তিমান সরকারের কাছে এক অপরিচিত ব্যক্তি নিজেকে RSS কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফোন করেছিলেন। কলকাতা থেকে যাওয়া সেই ফোনে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে চাওয়া হয়। কিন্তু বন্ধুপ্রকাশের পরিবার তা নিতে অস্বীকার করেছে।
খুনের পর আততায়ীদের দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছে বেশ কয়েকজন। সাক্ষী হিসেবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে শিক্ষকতার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কারবার করতেন বন্ধুপ্রকাশ। একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কম্পানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একইসঙ্গে SBI লাইফ, PNB মেট লাইফের এজেন্টও ছিলেন তিনি। রেডিসন চিপের ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন তিনি। এইসব কারবারের জন্য তার কিছু ধার দেনা ছিল। এর জেরে দিনকয়েক মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন বন্ধুপ্রকাশ। পাশাপাশি পুলিশ ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে বিউটির লেখা একটি চিঠি। যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি স্পষ্ট। তদন্তে সবকিছুই মাথায় রাখছে পুলিশ। ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
Be the first to comment