নবান্ন অভিযান ঘিরে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা, বন্ধ থাকছে কোন কোন রাস্তা?

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি:-

পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান কর্মসূচি। যদিও এই কর্মসূচিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছে পুলিশ। কিন্তু তারপরেও প্রস্তুতিতে খামতি রাখছে না কলকাতা পুলিশ। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় মঙ্গলবার মোতায়েন থাকবেন ৬,০০০ পুলিশকর্মী। ২৬ জন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিকও থাকবেন পথে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
পুলিশের আশঙ্কা ছিল, নবান্ন অভিযানে অশান্তি হতে পারে। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, দু’টি সংগঠনকে নবান্ন অভিযানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার পরেও সব রকম পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার প্রায় ৬ হাজার পুলিশ রাস্তায় নামছে। ১৯টি জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে ব‌্যারিকেড। এর মধ্যে পাঁচটি জায়গায় অ‌্যালুমিনিয়ামের দেওয়াল তৈরি হচ্ছে। থাকছে জলকামান ও বজ্র। সকাল আটটা থেকে চারজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ৬ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ২৬ জন ডিসির তত্ত্বাবধানে থাকছে বিশাল পুলিশবাহিনী। হাওড়া ব্রিজের কাছে স্ট্র‌্যান্ড রোড ও এম.জি. রোডের সংযোগস্থলে কলেজ স্কোয়ার থেকে আসা মিছিল আটকানো হবে। এখানে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, দু’জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, আটজন অ‌্যাসিস্ট‌্যান্ট কমিশনার, কুড়িজন ইন্সপেক্টর, ৯০ জন আধিকারিক, ৬০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও টার্ফ ভিউ, হেস্টিংয়ের চারটি জায়গা, ফার্লং গেট রোড, বিদ‌্যাসাগর সেতুর একাধিক জায়গায় অ‌্যালুমিনিয়াম ব‌্যারিকেড, সিজার ব‌্যারিকেড, গার্ডরেলের ব‌্যারিকেড বসানো হচ্ছে। সেখানেও পদস্থ পুলিশকর্তাদের তত্ত্বাবধানে থাকছে বিশাল পুলিশবাহিনী। এ ছাড়াও শ‌্যামবাজার, আরজিকর, আলিপুর, হাজরা, কালীঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গায় থাকছে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বদল করা হবে বা নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ‌্যায় জানান, মঙ্গলবার নিট পরীক্ষা আছে। কোনও পরীক্ষার্থী অথবা অন‌্য কেউ কোনও সমস‌্যায় পড়লে যেন স্থানীয় থানাকে জানান অথবা ১০০ ডায়ালে ফোন করবেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার বড় জমায়েতের অনুমান করা হয়েছে। সেই কারণে নবান্নের পার্শ্ববর্তী এলাকা সহ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ রাখা হচ্ছে, একই সঙ্গে কিছু রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, কোনা এক্সপ্রেস (নিবরা থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু), আন্দুল রোডের একাংশ, জিটি রোড (মল্লিক ফটক থেকে বেতাইতলা), হাওড়া স্টেশন থেকে গ্র্যান্ড ফোরসর রোড এইচআইটি ব্রিজ থেকে আরবি সেতু সহ একাধিক রাস্তায় গাড়ি চলাচল করবে না মঙ্গলবার। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, যে সমস্ত গাড়ি কোলাঘাট, ডানকুনি, হাওড়া, হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতার দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে আসতে চায় তাদের নিবেদিতা সেতু ব্যবহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা সাংবাদিক বৈঠক করে সোমবার সকালে জানিয়েছিলেন ওই মিছিলের জন্য কোনও অনুমতি তাদের থেকে নেওয়া হয়নি। এই মর্মে মঙ্গলবারের মিছিলকে ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করে তাঁরা জানিয়েছিলেন, নবান্নের কাছে ওই মিছিলের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সেখানে নতুন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা আইনের ১৬৩ ধারা জারি থাকে। অর্থাৎ সেখানে পাঁচ বা তাঁর বেশি জনের জমায়েত বেআইনি। সোমবার সকালের সেই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই তাঁদের কাছে দু’টি ইমেল এসে পৌঁছয় বলে বিকালে জানিয়েছেন এডিজি সুপ্রতিম সরকার। এর মধ্যে একটি ইমেল পাঠিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। কিন্তু তারা কোনও অনুমতি চায়নি। তারা শুধু পুলিশকে জানিয়েছে যে, মঙ্গলবার একটি অরাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চলেছে তারা। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নবান্নে অভিযান যাবে ছাত্রসমাজ। পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্র সমাজের ওই ইমেলে অনুমতি চাওয়া হয়নি। পাশাপাশি, কলকাতা হাই কোর্টের নিয়ম মেনে কর্মসূচি সংক্রান্ত যে সমস্ত জরুরি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যেমন তাঁরা কোন পথে এগোবেন, কী কর্মসূচি , কোথায় অবস্থান করবেন, সেই সব তথ্যও জানানো হয়নি। আর সে জন্যই ওই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় ইমেলটি এসেছিল সংগ্রামী যৌথমঞ্চের তরফে। সেই ইমেলে নিয়ম মেনে অনুমতি চাওয়া হলেও তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ নবান্নের কাছে ওই ধরনের কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। এই আবহে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার তারা প্রস্তুত থাকছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*