নবান্নের যুক্তি মানল না কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। বরং স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল শুক্রবার বিকেলে জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গে যে ১০ জেলাকে রেড জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা সুচিন্তিত ভাবেই করা হয়েছে। কোনও ভুল হয়নি।
বৃহস্পতিবার নবান্নকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে কোভিডের সংক্রমণের নিরিখে ১০টি জেলা হল রেড জোন। সেই সঙ্গে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী অরেঞ্জ জোনে রয়েছে পাঁচটি।
তবে কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে আপত্তি জানায় রাজ্য। কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বলেন, যে ভাবে ১০টি জেলাকে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে তা ভুল। এটা ঠিক করতে হবে। কারণ, বাংলায় মাত্র ৪টি জেলাতেই সংক্রমণ বেশি। যে দশ জেলাকে রেড জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলির কোথাও শেষ পজিটিভ কেস এসেছে ২ এপ্রিল, কোথাও ৪ এপ্রিল। রাজ্যের সেই দাবি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক মানতে চাইল না। বরং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল ব্যাখ্যা করে বোঝাতে চাইলেন কেন ওই ১০ জেলাকে রেড জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
লব আগরওয়াল বলেন, “আমরা বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখেছি। আজ হয়তো অনেক জায়গায় সংক্রমণের সংখ্যা কম, কিন্তু আগামী দিনে সেখানে যেন এমন না হয়, যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের দেখতে হবে কোন জেলার জনঘনত্ব কত। কোন জেলায় কত পরিমাণে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে”।
তাঁর কথায়, “এমন যেন না হয়, তলায় তলায় সংক্রমণ ছড়াতে ছড়াতে সাংঘাতিক অবস্থা হয়ে যায়। কোনও জেলার জনঘনত্ব বেশি হলে সেখানে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি। তাই এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে যে জেলায় আজ সংক্রমণ কম, কিন্তু ভবিষ্যতে সংক্রমণ বাড়তে পারে সেগুলোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব আরও বলেন, “এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, রেড জোন, অরেঞ্জ জোন ও কন্টেইনমেন্ট এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার আয়তন ও জনঘনত্ব অনুযায়ী আমরা কতগুলো পর্যবেক্ষক দল বানিয়েছি সেটা দেখা। সেই দল প্রতিদিন সবার বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করছে কিনা সেটা দেখা।
তারা কোনও ক্ষেত্রে গাফিলতি করছে কিনা, যাতে ভবিষ্যতে গিয়ে সেখানে সংক্রমণ বাড়তে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যেখান থেকে সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সেখান থেকে অন্য জায়গায় সংক্রমণ ছড়াতে না পারে।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সচিব প্রীতি সুদন সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে গোটা দেশের রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের তালিকা পাঠিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে দশটি জেলা হল রেড জোন। ওই দশ জেলা হল, কলকাতা, হাওড়া, দুই চব্বিশ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও মালদহ। আর অরেঞ্জ জোন হল, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ।
কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পংয়ের মতো জেলাকে রেড জোনে ফেলা যায় না। কারণ, দার্জিলিংয়ে শেষ কারও শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে ২১ এপ্রিল। জলপাইগুড়িতে ৪ এপ্রিল এবং কালিম্পংয়ে ২ এপ্রিলের পর কোনও কোভিড আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি। তা হলে এই জেলাগুলিকে কীভাবে রেড জোন বলা যায়? কেন্দ্র-রাজ্য মতের ফারাক হচ্ছে যে ৬ টি জেলা নিয়ে সেগুলি হল—দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং মালদহ।
Be the first to comment