আসন্ন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি বরদাস্ত নয়, কড়া বার্তা নবান্নের

Spread the love

ভোটে রাজনৈতিক হিংসা প্রতিরোধে এবার আরও কড়া হল রাজ্য ৷ এমনিতেই নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় রাজ্যের পরিস্থিতি গোটা দেশে আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে সিবিআই তদন্ত হওয়ায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এমতাবস্থায় রাজ্যে তিন আসনে ভোট আসন্ন। এর মধ্যে ভবানীপুর বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন এবং মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বিধানসভায় নির্বাচন রয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর।

এই অবস্থায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনও অস্বস্তিতে পড়তে হয় এমনটা চাইছে না নবান্ন। বুধবার নবান্নে এই তিন বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বি পি গোপালিকা। এই বৈঠক থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনকে কড়া হাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা দিয়েছি আমরা। তাই নির্বাচন চলাকালীন এমন কোনও ঘটনা যেন না ঘটে যার কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যকে।

নবান্ন সূত্রে খবর, মিনিট পঁয়তাল্লিশের এই বৈঠকে মুখ্য সচিব জানান, ভোটের আগে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলে নির্বাচন কমিশন সরকারের দিকেই আঙুল তুলবে কারণ ভোটের আয়োজন করলে যে আইন শৃঙ্খলা ঠিকঠাক থাকবে সে ব্যাপারে আমরাই কমিশনকে আশ্বস্ত করেছি। তাই আগে ভাগে সতর্ক হওয়া দরকার। পাশাপাশি কোভিড প্রোটোকল যাতে ঠিকভাবে মেনে চলা হয়, সেদিকেও নজর দিতে বলেছেন মুখ্যসচিব।

সূত্র মারফত খবর, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ কলকাতা ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ার জেলা প্রশাসনকেও আইন শৃঙ্খলা নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আর দু-একদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে বিভিন্ন এলাকায় ডমিনেশনের কাজ শুরু করবে। ভোটের আগে এই সমস্ত জেলাগুলিতে যাতে কোনও রাজনৈতিক অশান্তি না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে নজর রাখতে বলেছে নবান্ন। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক রং না দেখে তা কড়া হাতে দমন করতে হবে বলে এদিন জানান মুখ্যসচিব।

পুলিশ কমিশনারদের মুখ্যসচিবের নির্দেশ দিয়ে বলেন, “আপনারা আইন-শৃঙ্খলার দিকটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিন। এবারে নির্বাচনের এপিসেন্টার ভবানীপুর। প্রার্থী খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুযুধান প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। উপনির্বাচনের আগে শহর কলকাতা জুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে নাকা চেকিং। ভোট চলাকালীন যে কোনও প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তার কোনও খামতি রাখতে নারাজ ডিসি সাউথ আকাশ মাঘারিয়া।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভবানীপুর উপনির্বাচনের কথা ভেবে বাড়ানো হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা । শুধুমাত্র কলকাতাতেই আসছে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তিন কেন্দ্রে মোট ৬৭ কোম্পানি বাহিনী আসছে। সর্বত্রই আজ থেকে রুট মার্চ শুরু করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভবানীপুর, সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর-এই তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু করতে মূলত চারটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে বিজেপি।

কমিশনের কাছে যে চিঠি বিজেপির তরফে দেওয়া হয়েছে, তাতে মূলত কয়েকটি বিষয়ে জোর দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর যে তিন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট রয়েছে, সেখানে সব বুথের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছে বিজেপি। প্রতিটা বুথেই সিআরপিএফ-কে নিরাপত্তায় রাখতে হবে বলে জানিয়েছে তাঁরা। বুথ বা নির্বাচনী কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের প্রবেশ নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি ৷

ভবানীপুর নির্বাচনে এবার প্রার্থী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন মূল প্রতিপক্ষ প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল । ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। একসময়ে বাবুল সুপ্রিয়র আইনি পরামর্শদাতা ছিলেন তিনি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে এন্টালি থেকে প্রার্থী করা হলেও সেখানে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহার কাছে হেরে যান তিনি ৷ উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*