একই ছাদের নিচে নমাজ ও পুজোপাঠ

Spread the love

তপন মল্লিক চৌধুরী

কাঠের নড়বড়ে দরজা ঠেলে বাড়ির ভিতরে ঢোকার পর যেটা চোখে পড়বে; তার সঙ্গে আত্মস্থ হতে একটু সময় লাগে। একদিকে সমাধি। অন্যদিকে চলছে জগন্নাথ, নাড়ুগোপালের পুজো; যা প্রত্যেক সন্ধ্যায় নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গেই হয়ে থাকে। আবার সন্ধ্যা হলে সেখানেই নমাজ পাঠ হয়, তুলসিতলায় যত্নে প্রদীপ জ্বালেন বাড়ির ছেলে শাহ আলম খাদিম। কেতুগ্রামের কান্দরার মোল্লাপাড়ার খাদিম বাড়ি এমনই সহাবস্থানের নজির। বাড়ির কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী হিন্দু, মুসলমান নয়, এ হল মানুষের উপাস্যস্থল।

ধর্মীয় ভেদাভেদ, বিভেদের রাজনীতির কারণে আজ বেশি বেশি করে হানাহানি-মারামারি-কাটাকাটির ঘটনা ঘটছে দেশের সর্বত্র। এরকম এক সাংঘাতিক সময়ে এমন একটি বাড়িতে এসে কেবল এলাকার মানুষেরাই নন শান্তি পান যে কোনো স্থানের যে কোনো ধর্মের, যে কোনো বর্ণের মানুষ। বাড়ির ছোট ছেলে, বছর চল্লিশের শাহ আলম খাদিম প্রত্যেকদিন পুজো করেন জগন্নাথ, চৈতন্যের। তাঁর ভক্তির টানে এ বাড়িতে পুজো দিতে আসেন বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের লোক। বাসিন্দাদেরা কাছ থেকে জানা গেল, শাহ আলমের ডাক নাম টিটু, স্কুলের গণ্ডী না পেরোলেও পুজোপাঠে ছোট থেকেই মতি তাঁর। বাবা জাহের খাদিমের কাছেই মন্ত্রপাঠ শেখা। জাহের খাদিমকে সমাধিস্থও করা হয়েছে জগন্নাথ মন্দিরের পাশেই।

ভক্তদের দেওয়া চাল-কলা নিবেদন করতে করতে শাহ আলমও ডুবে যান স্মৃতিতে। বলে চলেন, এগারো পুরুষ আগে তাঁদের পরিবারের কোনও এক জন উত্তরপ্রদেশে অযোধ্যার পথে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন ধাতুর এই জগন্নাথ মূর্তি। তা নিয়ে বাড়ি আসেন তিনি। কিন্তু অন্যরা ধর্মের জিগির তুলে সেই মূর্তি ডোবায় ফেলে দেন। শাহ আলমের কথা অনুযায়ী এরপরেই পরিবারে নেমে আসে অমঙ্গল। বাড়ির এক জন স্বপ্নাদেশ পান, ডোবা থেকে মূর্তি তুলে এনে পজো করলে শান্তি ফিরবে। জলে মূর্তি খুঁজতে নামলে মেলে ধাতুর নয়, জগন্নাথের দারুবিগ্রহ। সেই থেকেই জগন্নাথকে এখানে ‘বুড়োরাজ’ ডাকা হয়।

এলাকার প্রমীলা আচার্য, মিজানুল কবীরার কথায় জানা গেল, যে কোনও অনুষ্ঠানে খাদিমবাড়িতে পুজো দেওয়াটা এ তল্লাটের রেওয়াজ। প্রত্যেক বছর মহালয়ার সপ্তাহখানেক আগে বড় উৎসবও হয়। শাহ আলমের স্ত্রী টুম্পা খাদিম জানান,  তিনি যেমন রোজা রাখেন তেমনই আবার স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঠাকুরকে জল-বাতাসাটুকুও তাঁকেই দিতে হয়।

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*