নন্দীগ্রামে ভোটের প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবারই। তবে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে বহিরাগত আটকানোই এখন পুলিশের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাইরে থেকে লোক ঢুকিয়ে নন্দীগ্রামে ভোটের দিন ঝামেলা করা হতে পারে বলে নিয়ম করে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। দলের তরফেও নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার বহিরাগত ইস্যুতে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের আগে বহিরাগতদের নন্দীগ্রামে ঢুকতে না-দেওয়াটাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে দু’পক্ষের চাপানউতোরও। যেভাবে ক্রমাগত চড়ছে নন্দীগ্রামে ভোটের আঁচ, তাতে দ্বিতীয় দফার সার্বিক নির্বাচনেও অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশনও।
তাই শুধু নন্দীগ্রাম নয়, দ্বিতীয় দফায় চার জেলার তিরিশ বিধানসভা কেন্দ্রে অশান্তির মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনমতো আইনমাফিক ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জেলাশাসকদের জানিয়ে দিল কমিশন। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধিতে এই অধিকার জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে দেওয়া রয়েছে।
সাধারণত বুথের দু’শো মিটারের মধ্যে জমায়েত এড়াতে অতীতের ভোটে ১৪৪ ধারা প্রয়োগের নজির রয়েছে। তবে এবার রিটার্নিং অফিসাররা তাঁর এলাকার মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন মনে করলে যে কোনও জায়গাতেই ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করতে পারবেন।
কমিশনের কড়াকড়ির মধ্যেও বহিরাগত ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাতের পারদ চড়ছেই। এদিনও নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান এদিন রাতেও অভিযোগ করেন, ‘অন্তত দশটা জায়গায় ওরা বাইরের লোক এনে জমা করে রেখেছে। রেয়াপাড়া, বিরুলিয়া, গোকুলনগর, টেঙ্গুয়া সহ একাধিক জায়গায় বিভিন্ন বাড়িতে লোক জমা করা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পুরোটা জানাচ্ছি।’
পাল্টা বিজেপি নেতা, তথা নন্দীগ্রামে দলের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী এজেন্ট মেঘনাদ পাল বলেন, ‘এখন সামনে শুধু ভোট। পুলিশ তো চারদিকে নজর রেখেছে। আর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যাও কম নয়। কাজেই ওরা চাইলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাক। ঘটনা সত্যি হলে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।’
কমিশন সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৩৫৫। শুধু এই কেন্দ্রের জন্য থাকবে মোট ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৭৫ শতাংশ বুথে ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বুথে একজন করে মাইক্রো অবজারভার থাকছেন। বহিরাগত নিয়ে তৃণমূলের লাগাতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাত থেকেই নাকা চেকিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে ২২টি কুইক রেসপন্স টিমের পাশাপাশি নামানো হবে স্ট্যাটিক সার্ভাইলেন্স টিম। প্রতিটি সেক্টরে আটটি করে এই টিম রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজন মতো রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীও নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। নন্দীগ্রামের ভোট নজরদারি করতে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরেও খোলা হচ্ছে বিশেষ সেল। নন্দীগ্রামে একজন সাধারণ পর্যবেক্ষক রয়েছেন। পাশাপাশি একজন পুলিশ পর্যবেক্ষককেও এই বিধানসভা কেন্দ্রে নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কলকাতায় বসে কমিশনের দুই বিশেষ পর্যবেক্ষকও নিয়মমাফিক নজরদারি চালাবেন।
Be the first to comment