মাওবাদী সমস্যা ভারতে দীর্ঘদিনের। তবে এই মাওবাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ তুলে ধরছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই তালিকায় শহুরে নকশালের পর মোদির মুখে শোনা গেল কলমধারী মাওবাদীদের কথা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে চিন্তন শিবিরে বক্তব্য রাখার সময় কলমধারী মাওবাদীদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব ধরনের নকশালবাদকে পরাস্ত করতে হবে আমাদের, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।” তবে প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে বিরোধীদের তরফে। বিরোধীদের দাবি, সমালোচনা বন্ধ করতেই মোদি সরকার সব শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। স্বৈরশাসনের লক্ষ্যেই এই ধরনের মন্তব্য করছেন তিনি।
ওই সভায় ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে সব রাজ্যের সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় এর মোকাবিলা করতে হবে। সব ধরনের নকশালবাদের মোকাবিলা করতে হবে, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।”
তবে মোদির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বাম সব দলগুলি। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সান্তনু সেন বলেন, “মাওবাদী কী, যাঁরা মাও সে তুংয়ের অনুগামী, সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাদখলে বিশ্বাস করে। আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। পাকিস্তানের আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছে না, চিনের আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, একনায়কতন্ত্র, ক্ষমতার দম্ভ। ভারতের গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সকলকে ভয় দেখিয়ে রাখা হচ্ছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বিচারব্যবস্থাকে প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, রামমন্দিরের মতো রায় দিতে পারলে অবসরের পর রাজ্যসভার সাংসদ। আর সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ হচ্ছে। রাজা তোর কাপড় কথায় জিজ্ঞেস করলেও, সে মাওবাদী হয়ে যাবে। আজ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে থাকলে, তাঁরাও মাওবাদী হয়ে যেতেন।”
পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, নকশালবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ভালো কথা। কিন্তু তার নামে বিরোধীদের খতম করার চেষ্টা চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা, সমালোচনাকেই নকশালবাদ বলে দাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। সমালোচনা বন্ধ করতেই মোদি সরকার সব শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। যে বিরোধিতা করবে,. সে হয় নকশাল, নয় পাকিস্তানি, নয় সন্ত্রাসবাদী। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ির কথায়, “প্রধানমন্ত্রী ভূত দেখছেন। যে ওঁর বিরোধিতা করবেন, তাঁকেই মাওবাদী বলে দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিজে কী খাবার রয়েছে, তার জন্য পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। তা নিয়ে কোনও কথা নেই মুখে। যে ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তিনি কবি হোন, সাহিত্যিক হোন, সাংবাদিক হোন, বিরোধী রাজনীতিক হোন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে আনছেন।”
Be the first to comment